যে ভিডিয়োয় দেখায় মেয়েরা যৌনসুখ উপভোগ করছে, তা দিব্যি লাগে। তার সঙ্গে অন্য কোনও পর্নের তুলনা হয় না!
বক্তব্যটি এক মহিলার। এ শহরের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ইঞ্জিনিয়র। নাম নবনীতা রায়। বয়স ৩৭।
মেয়েরা আবার পর্ন দেখে নাকি? দেখলেও বলে নাকি! এমন ভাবনা ইতিমধ্যে অনেকের মনেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে।
যৌনতা নিয়ে আলোচনা থেকে ভিডিয়ো দেখা, সবই পুরুষদের ক্ষেত্র। এমনই ধরে নেওয়া হয় অধিকাংশ সময়ে। কিন্তু বাস্তব ও ধারণার মাঝে দূরত্ব ছিলই। আরও বেড়েছে। স্মার্ট ফোন আর ব্যক্তিগত ল্যাপটপের এই যুগে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা এমন ভিডিয়োর দিকে ঝুঁকছেন। আন্তর্জাতিক এক পর্ন সাইট সম্প্রতি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, তাদের প্রতি দশজন গ্রাহকের মধ্যে অন্তত তিনজন মহিলা।
কী ধরনের পর্ন দেখতে পছন্দ করে মেয়েরা? জানতে ইচ্ছা করবেই। কিন্তু এক শব্দে এ কথার কোনও উত্তর হয় না। ১৭ থেকে ৫৭, নানা বয়সের মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য মেলে। ছেলেরাও যেমন নানা ধারার পর্ন দেখতে ভালবাসে, মেয়েরাও তেমনই। পরিস্থিতি, বয়স, অভিজ্ঞায় প্রেক্ষিতের সঙ্গে বদলে যায় পছন্দ। কখনও বন্ডেজ দেখতে ভাল লাগে তো কখনও অ্যানিমেশনেই মন যায়। কোনও সময়ে জাপানের পর্ন বেশি দেখা হয়, তো কোনও বয়সে ভারতীয়। তবে মহিলাদের চাহিদার ধরনে একটি মিল পাওয়া যাচ্ছে।
তা কেমন?
মেয়েদের যৌনচাহিদা যেখানে গুরুত্ব পাবে, তা-ই তুলনায় বেশি জনপ্রিয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সমীক্ষায় এ কথা উঠে এসেছে। এ শহরের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেও তেমনই জানা যাচ্ছে। এমন কিছু দেখতে হবে, যেখানে তার ইচ্ছা মূল্য পায়।
এক সময়ে পর্ন ছবি বানানো হত মূলত পুরুষ দর্শকের কথা মাথায় রেখে। পুরুষ মানেই মহিলাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে পছন্দ করবে, সে কথাও ধরে নেওয়া হত। ফলে মহিলারা থাকত সে সব ছবিতে ছাহিদার বস্তু হিসাবে। এক অর্থে পণ্য। এই ধারণার উপরে ভিত্তি করেই একটি কল্পজগৎ তৈরি হতো। শুধু পর্ন কেন, সাধারণ চলচ্চিত্র থেকে বিজ্ঞাপনেও সে ভাবনার স্পষ্ট ছাপ থাকত। এখনও থাকে বহু ক্ষেত্রে।
তবে সময়ের সঙ্গে সবেতেই কিছু বদল এসেছে। পর্নও তার বাইরে নয়। মহিলা গ্রাহক যত বাড়ছে, তত তাদের পছন্দের দিকে নজরও দেওয়া হচ্ছে। আবার মহিলাদের পছন্দে গুরুত্ব দিয়ে নতুন ধরনের ভিডিয়ো তৈরি হওয়ায় বাড়ছে গ্রাহকের সংখ্যাও। সম্প্রতি এক পর্ন সাইটের তরফে জানানো হয়েছে, সমকামী নারীদের যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার ভিডিয়ো সবচেয়ে বেশি দেখেন তাদের মহিলা গ্রাহকেরা। তাই সে ধরনের ভিডিয়োর জোগান বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। শহরের এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুচরিতা সাহার পছন্দও তেমন। বলেন, ‘‘আমি সমকামী নই। কিন্তু দু’জন মহিলার যৌনসঙ্গমের ভিডিয়ো দেখতে ভাল লাগে। এর একটাই কারণ, সেখানে মহিলাদের পছন্দই প্রাধান্য পায়। নিজের চাহিদার সঙ্গে মিল দেখতে পাই।’’ পর্ন দেখে যে উত্তেজনা অনুভব করতে চান, তা পাওয়া যায় সেখানে। একজন পুরুষ কোনও পছন্দের নারীর সঙ্গে সঙ্গমে কী সুখ পেলেন, তা দেখে আনন্দ পান না তিনি।
তবে কি মহিলারা শুধু সমকামী পর্ন দেখে থাকেন? তেমন কিন্তু একেবারেই বলা চলে না। মহিলাদের পছন্দে নজর দিয়ে অন্য ধারার পর্নও তৈরি হচ্ছে। নবনীতা যেমন একেবারেই পছন্দ করেন না সমকামী ভিডিয়ো দেখতে। যেখানে কিশোরীরা অভিনয় করে, তেমন ভিডিয়োও অপছন্দ তাঁর। তবে পছন্দের পর্ন কী? ‘‘মেয়েদের পণ্য হিসাবে না দেখানো হলে, যে কোনও ভিডিয়ো দেখতেই ভাল লাগে,’’ উত্তর নবনীতার। নিজে সমকামী নন, তাই তেমন ভিডিয়ো তাঁর পছন্দ হয় না বলেও জানালেন নবনীতা।
পাচ্ছে ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। এক সময়ে ধারণা ছিল মহিলাদের দেখাতে হলে চালাতে হবে ‘সফ্ট পর্ন’। কিন্তু মহিলাদের যৌন-কল্পনা কেন্দ্র করে ‘হার্ডকোর পর্ন’-ও তৈরি হয়। ফলে যৌনসঙ্গমের ভিডিয়োয় আলগা ভালবাসার গন্ধ থাকা এখন আর প্রধান দাবি নয় মহিলাদের ক্ষেত্রেও। বরং বিডিএসএম দেখতেও দিব্যি ভাল লাগে একদল মহিলার। কলেজছাত্রী অন্নপূর্ণা বিশ্বাস বলেন, ‘‘বান্ধবীদের সঙ্গে চিয়ারলিডার পর্ন দেখতে ভাল লাগে। দলে বসে হইহই করে দেখার মতোই হয় সেগুলি। তবে প্রেমিকের সঙ্গে আলাদা থাকলে বন্ডেজ দেখি। বেশ অন্য রকম অনুভূতি হয়।’’
তবে কি মেয়েদের মধ্যে ‘সফ্ট পর্ন’ দেখার আর চল নেই? তেমনও নয়। যৌনসঙ্গমের সময়ে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে এখনও পছন্দ করেন সে ধরনের ছবি দেখতে। ‘‘তাতে নিজেদের কল্পনাশক্তি কিছুটা হলেও বেঁচে থাকে,’’ বলে মত তিরিশ ছুঁই ছুঁই অহনা মান্নার। একমত অহনার বন্ধু বিকাশ অগ্রবালও। এমনি সময়ে সব ধারার পর্ন দেখলেও মহিলা সঙ্গীকে নিয়ে হাল্কা মেজাজের কিছু দেখতে পছন্দ করেন। ‘‘তাতে একসঙ্গে সময় ভাল কাটে,’’ বলেন বিকাশ।
পছন্দ-অপছন্দের কথা তবে এখন সহজেই বলেন মেয়েরা? কোন পর্ন বেশি প্রিয়, তা নিয়ে অফিসে আলোচনা করেন? পরিস্থিতি অত সহজ হয়নি। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই নবনীতা থেকে কুড়িতে পা অন্নপূর্ণা, সকলের অভিজ্ঞা একই কথা বলছে। তাঁদের পছন্দের কথা বলার মতো পরিবেশ এখনও নেই। এমনকি, বহু ক্ষেত্রে প্রেমিকও প্রেমিকার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় ঢোকেন না। এ শহরের মেয়েদের তেমন অভিজ্ঞতাও আছে।