শিশুদের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি করতে পারলে সমাজ উন্নত হবে। মূল্যবোধ তৈরির ওপর পুরো সমাজের প্রভাব থাকলেও বাবা-মা বা পরিবারের প্রভাবই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সদস্যরা একটু সচেতন হলেই আমরা ইতিবাচক মূল্যবোধসম্পন্ন সন্তান পাব। শিশুর মূল্যবোধ তৈরির কতগুলো নিয়ামক জানালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজীর আহমেদ তুষার-
সত্যবাদিতা : শিশুদের শৈশব থেকেই মিথ্যার কুফল কী বোঝাতে হবে। এজন্য ‘রাখাল ও বাঘের গল্প’ গল্পটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। তাদের আশ্বস্ত করতে হবে যে বাবা-মায়ের সঙ্গে সত্য কথা বললে বাবা-মা তাদের বকাঝকা না করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবেন। অন্যদিকে মিথ্যা বললে বাবা-মা মনঃক্ষুণ্ন হবেন। একটি বিষয় জেনে রাখবেন বাবা-মা শিশুর সামনে নিজেরা মিথ্যার আশ্রয় নিলে শিশুরাও মিথ্যা বলা শিখবে।
শ্রদ্ধাবোধ : শিশু শ্রদ্ধাবোধ শেখে পরিবার থেকে। শিশুরা যদি দেখে পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে শ্রদ্ধার সঙ্গে কথা বলছে তাহলে তাদের মধ্যেও শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়। তাই পারিবারিক শ্রদ্ধাবোধ সব পরিস্থিতিতেই বজায় রাখতে হয়। এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও মান-অভিমান হলেও একে অপরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধার জায়গাটি অক্ষুণœ রাখতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কথা বলার সময় ধন্যবাদ, অভিনন্দন, এক্সকিউজ মি, প্লিজসহ বিভিন্ন ধরনের সৌজন্যমূলক আচরণ এবং বয়স ও সম্পর্ক অনুযায়ী সম্মান দিয়ে কথা বলার অভ্যাস তৈরি ও বজায় রাখা প্রয়োজন।
কৃতজ্ঞতা : মানসিক সুস্থতার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের ভালো বিষয়গুলোর জন্য দিন শেষে কৃতজ্ঞ থাকতে শেখান। এই ভালো বিষয়গুলো হতে পারে ছোট ছোট ভালো ঘটনা, কারও হাসি, যেকোনো স্বীকৃতি, কোনো উপহার, ভালো খাবার, সুস্থতা, ভালো আশ্রয়স্থল ইত্যাদি। এমনকি বেঁচে থাকার জন্যও সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও শেখাতে পারেন।
পরিচ্ছন্নতা : ঘর, রাস্তা, পার্ক, স্কুলসহ শিশুর সব স্থানই পরিষ্কার রাখার শিক্ষা দিন। তাকে এটাও শেখাতে পারেন তুমি পরিষ্কার রাখলে অন্যরা তোমাকে দেখে এটা শিখবে। এর ফলে বড় হয়েও সেগুলো বজায় রাখতে পারবে।
উদারতা : শিশুকে ভাগ করে নেওয়ার মানসিকতা শিখতে সাহায্য করুন। পৃথিবীটা শুধু যে নেওয়ার জায়গা নয়, দেওয়ারও জায়গা শিশুকে বোঝাতে হবে। অন্যকে সাহায্য করতে, অন্য শিশুদের খাবারের ভাগ দিতে ও নিজের খেলনা দিয়ে অন্যের সঙ্গে খেলতে শেখাতে হবে। অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করতে শেখান। এতে তার মানসিকতার বিকাশ ঘটবে।
ন্যায়পরায়ণতা : শিশুর সঙ্গে ন্যায় আচরণ করুন। শিশু কোনো অন্যায় করলে তাকে আলাদাভাবে ডেকে বুঝিয়ে বলুন। তাকে এটাও বুঝিয়ে দিন তার কাজটি কী কারণে অন্যায় হয়েছে। তাকে সরি বলতে বা ক্ষমা চাইতে শেখান। সরি বললে ছোট হয় না এটাও শেখান।
ক্ষমাশীলতা : শিশু বয়সে ক্ষমা করতে না শিখলে বড় হয়ে তার মধ্যে রূঢ়তা বাড়বে। ক্ষমা মানুষকে বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। মন থেকে ক্ষমা করতে পারলে মানুষ মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারে। শিশুদের ক্ষমা করতে উৎসাহিত করুন। তাদের শেখান ক্ষমা মানুষকে ছোট নয় বরং বড় করে।bs