আজকাল জীবনযাত্রায় আরাম এতটাই বেড়েছে যে সিঁড়ি দেখলেই আমরা লিফটের খোঁজ করি। অথচ এই অলসতাই ডেকে আনছে অজস্র শারীরিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিফট থাকা সত্ত্বেও যদি আপনি প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার অভ্যাস করেন, তাহলে আপনার জীবনে আসতে পারে অভাবনীয় স্বাস্থ্যগত পরিবর্তন। কারণ, এটি কেবল একটি অভ্যাস নয়, এটি সুস্থ থাকার এক সহজ ও কার্যকরী উপায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই অভ্যাসের ৭টি অসাধারণ উপকারিতা:
১. দ্রুত ওজন কমায়
সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা হাঁটার চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর একটি ব্যায়াম, যা দ্রুত ক্যালোরি ঝরাতে সাহায্য করে। আমেরিকান কাউন্সিল অন এক্সারসাইজের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সিঁড়ি আরোহণে প্রতি মিনিটে প্রায় ৮ থেকে ১১ ক্যালোরি ঝরে যায়। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার গতি বাড়ালে বা একসঙ্গে একাধিক ধাপ পার হলে ক্যালোরি কমানোর হার আরও বাড়ে। এটি ওজন কমানোর জন্য এক দারুণ ‘ফ্যাট বার্নার’।
২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
নিয়মিত সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা হার্টবিট বাড়াতে সাহায্য করে, যা হৃদপিণ্ডের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে তোলে। এটি রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও কার্যকর। সারা শরীর জুড়ে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা রক্ত জমাট বাঁধা, এথেরোস্ক্লেরোসিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৩. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
শারীরিক পরিশ্রম উদ্বেগ এবং হতাশার লক্ষণগুলিকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। সিঁড়ি আরোহণের ফলে শরীর থেকে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা ‘সুখী হরমোন’ নামে পরিচিত। এই হরমোন সুখ এবং শিথিলতার অনুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে, যা মানসিক চাপ কমাতে অত্যন্ত সহায়ক।
৪. ডায়াবেটিস রাখে নিয়ন্ত্রণে
একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা উন্নত হয়। যারা নিয়মিত সিঁড়ি আরোহণ করেন, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এমনকি মাত্র ৩-৫ মিনিটের সিঁড়ি আরোহণও গ্লুকোজ এবং ইনসুলিনের ঘনত্বের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে
সিঁড়ি বেয়ে ওঠার অভ্যাস হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ইএসসি প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি ২০২৪-এর ফলাফল অনুযায়ী, যারা নিয়মিত সিঁড়ি বেয়ে ওঠেন, তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ৩৯% কম থাকে। এটি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
৬. হাড়ের স্বাস্থ্য মজবুত করে
সিঁড়ি আরোহণ হাড় এবং পেশীর জন্য একটি চমৎকার ওজন বহনকারী ব্যায়াম, যা তাদের শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এই অভ্যাস হাড়ের ঘনত্ব এবং স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়ক। এর ফলে অস্টিওপরোসিস এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ের রোগের ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
৭. স্ট্যামিনা বাড়ে
বিশেষ করে যারা অলস জীবনযাপন করেন, তাদের জন্য সিঁড়ি বেয়ে ওঠা স্ট্যামিনা বা কর্মক্ষমতা বাড়ানোর একটি সহজ উপায়। নিয়মিত সিঁড়ি বেয়ে উপরে ও নিচে যাওয়া আপনার ধৈর্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং সামগ্রিক ফিটনেসের মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে।
সুতরাং, লিফটের আরাম ছেড়ে আজ থেকেই সিঁড়ি বেয়ে ওঠার অভ্যাস শুরু করুন। এই সহজ অভ্যাসই আপনার সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনের চাবিকাঠি হতে পারে।