‘মধুরও কি ভেজাল হয়?’—এই প্রশ্নটা আজ আর অবাক করার মতো নয়। কারণ, অভিযোগ উঠছে যে, আজকাল বাজারচলতি অনেক নামি কোম্পানির প্রক্রিয়াজাত মধুতেও ভেজাল মেশানো হচ্ছে। খাঁটি মধুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সর্বজনবিদিত হলেও, ভেজাল মেশানো মধু শুধু অর্থ নষ্ট নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ক্রেতা হিসেবে আপনার জন্য খাঁটি মধু চেনার উপায়গুলো জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। সামান্য সচেতনতাই আপনাকে এই প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
খাঁটি মধু চিনবেন যে ৮ উপায়ে:
১. স্বাদ পরীক্ষা: খাঁটি মধুর স্বাদ হবে সম্পূর্ণ মিষ্টি, কোনো অপ্রীতিকর ঝাঁজালো ভাব এতে থাকবে না। জিভে লেগে থাকবে এক স্নিগ্ধ মধুরতা।
২. গন্ধের বিচার: খাঁটি মধুর একটি নিজস্ব মিষ্টি ও আকর্ষণীয় সুগন্ধ থাকে। এতে কখনো কটু বা কৃত্রিম গন্ধ পাওয়া যাবে না। যদি ঝাঁজালো বা অন্য কোনো অস্বস্তিকর গন্ধ পান, তবে সতর্ক হন।
৩. শীতকালীন বৈশিষ্ট্য: এটি খাঁটি মধু চেনার অন্যতম প্রধান উপায়। শীতকালে বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় খাঁটি মধু দানা বেঁধে যায়, বা জমাট বাঁধে। যদি আপনার মধু শীতকালেও তরল থাকে, তবে তাতে ভেজাল থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
৪. ব্লটিং পেপার পরীক্ষা: এক টুকরো ব্লটিং পেপার নিন এবং তার উপর কয়েক ফোঁটা মধু দিন। যদি কাগজটি মধু পুরোপুরি শুষে নেয়, তবে বুঝতে হবে মধুটিতে ভেজাল রয়েছে। খাঁটি মধু সহজে কাগজের দ্বারা শোষিত হয় না।
৫. কাপড়ে দাগ পরীক্ষা: একটি সাদা কাপড়ে কয়েক ফোঁটা মধু মাখান। প্রায় আধ ঘণ্টা পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি কাপড়ে মধুর কোনো দাগ থেকে যায়, তবে সেই মধু খাঁটি নয়। খাঁটি মধু কাপড়ে স্থায়ী দাগ ফেলে না।
৬. মোমবাতি পরীক্ষা (আগুন): একটি মোমবাতির সলতেটি ভালোভাবে মধুতে ডুবিয়ে নিন। এরপর আগুন দিয়ে জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি সলতেটি জ্বলে ওঠে, তবে মধু খাঁটি। কারণ, মধুতে জল মেশানো থাকলে তা সহজে জ্বলবে না।
৭. জমাট বাঁধা মধু গরম করার পদ্ধতি: দীর্ঘদিন ঘরে রেখে দিলে খাঁটি মধুতে চিনি জমতেই পারে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বয়ামসহ মধুটিকে কিছুক্ষণ গরম জলে রেখে দেখুন। যদি জমে থাকা চিনি গলে মধু আবার স্বাভাবিক তরল অবস্থায় ফিরে আসে, তাহলে এটি খাঁটি। নকল মধু বা ভেজাল মিশ্রিত মধুর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ করবে না।
৮. জলে মেশানোর পরীক্ষা: একটি গ্লাস বা বাটিতে খানিকটা জল নিন। এবার তার মধ্যে এক চামচ মধু সাবধানে দিন। যদি মধু জলের সঙ্গে সহজেই মিশে যায়, তবে এটি ভেজাল। আসল মধুর ঘনত্ব জলের চেয়ে অনেক বেশি হয়। এটি সহজে জলের সঙ্গে মিশে যায় না, এমনকি নাড়া না দিলেও মধু গ্লাসের তলায় জমাট হয়ে পড়ে থাকে।
এই সহজ পরীক্ষাগুলো অনুসরণ করে আপনি নিজের ঘরে বসেই ভেজাল মধু চিনতে পারবেন। মনে রাখবেন, খাঁটি মধু শুধু সুস্বাদু নয়, এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও এক অমূল্য সম্পদ। তাই সচেতন থাকুন এবং ভেজালমুক্ত পণ্য ব্যবহার করুন।