ভিটামিন সি-এর ঘাটতি পূরণে কী খাবেন রইল লিস্ট

দেখতে ছোট হলেও গুণাগুণে ঠাসা আমলকি। বিজ্ঞানীদের মতে, একটি মাঝারি আকারের কমলার চেয়েও বেশি ভিটামিন সি বিদ্যমান এই ছোট্ট ফলে। শুধু তাই নয়, ডালিমের চেয়ে প্রায় ১৭ গুণ বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ফলটি। হাজারো পুষ্টিগুণে ভরপুর আমলকি হজমশক্তি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় দারুণ কাজ দেয়।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও আমলকির গুরুত্ব অপরিসীম। ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণেও এটি কার্যকরী বলে মনে করা হয়। বার্ধক্য প্রতিরোধে, চুল ঘন ও লম্বা করতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও আমলকির জুড়ি মেলা ভার। আমলকি একটি অন্যতম প্রাকৃতিক টনিক। এটি ত্বককে উজ্জ্বল করে, রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতেও সহায়ক।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে বহু রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কাঁচা আমলকি, আমলকির চাটনি বা মিছরিও খাওয়া যেতে পারে। তবে কঠিন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন সকালে একটি করে কাঁচা আমলকি খাওয়াই যথেষ্ট। জেনে নিন নিয়মিত আমলকি খেলে কোন রোগগুলো থেকে আপনি সুরক্ষিত থাকতে পারেন:

সর্দি-কাশি প্রতিরোধে: আমলকিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে বিভিন্ন ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়। সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে দিনে দু’বার দুই চা চামচ আমলকির গুঁড়ো সামান্য মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকিতে থাকা ক্যারোটিন চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক। প্রতিদিন আমলকি খেলে চোখের ছানি পড়ার সমস্যা বা চোখের ফোলাভাব কমে। পাশাপাশি লালচে চোখ, চুলকানি এবং চোখ দিয়ে জল পড়ার সমস্যাতেও আরাম পাওয়া যায়।

মেদ কমায়: ওজন নিয়ন্ত্রণে আমলকি অত্যন্ত কার্যকরী। যারা নিয়মিত আমলকি সেবন করেন, তাদের অনেকেই জানিয়েছেন যে খাওয়ার আগে এক গ্লাস জলে আমলকির গুঁড়ো বা রস মিশিয়ে পান করলে পেট ভরে যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই কম খাওয়া হয়। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে, আমলকি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকেও বাড়িয়ে তোলে, যা অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। আমলকিতে উচ্চমাত্রায় ফাইবার এবং ট্যানিকের মতো অ্যাসিড থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: আমলকির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যাস্ট্রিনজেন্ট বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। ক্যান্সারসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগ অক্সিডেটিভ ক্ষতির কারণে হতে পারে। আমলকিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি কোষের সেই ক্ষতি পূরণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

চুল সুন্দর করে: আমলকি চুলের জন্য এক অসাধারণ টনিক। এটি চুল পড়া বন্ধ করে, খুশকি দূর করে, চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী করে এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যার ফলে চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। আমলকি একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে। নিয়মিত আমলকির হেয়ারপ্যাক ব্যবহারে চুল হয় ঝলমলে, কোমল ও শক্তিশালী।

ত্বকের যত্নে: আমলকিতে অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। প্রতিদিন সকালে মধুর সঙ্গে আমলকির রস পান করলে দাগহীন, স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া যায়।

কোলেস্টেরল দূর করে: নিয়মিত আমলকি গ্রহণের ফলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) দূর হয় এবং ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়ে। এছাড়াও, আমলকি ইনসুলিন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তচাপ বেশি থাকলেও প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আমলার রস পান করলে দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আসে।

ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়: জয়েন্টে ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় আমলকি দারুণ কাজ করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক।

আমলা কীভাবে খাবেন?

সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে তাজা আমলার রস পান করাই শ্রেয়। তবে আমলকির টক ও তেঁতো স্বাদের জন্য রস খেতে অসুবিধা হলে জলের সঙ্গে আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে পান করতে পারেন। এছাড়াও, আমলকি কেটে ছোট ছোট টুকরো করে সামান্য লবণের সঙ্গে মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে মুখশুদ্ধি হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে। তবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি কাঁচা আমলকি খাওয়াই কঠিন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ উপায়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy