তথ্য ও সচেতনতা থাকা সত্ত্বেও, ভারতের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা আজও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে, ভাত বা রুটির মতো সাংস্কৃতিক এবং আরামদায়ক খাদ্যশস্যের পরিমাণ কমানো বাস্তবে অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদরা বলছেন, একটি সুস্থ ভারত গড়তে হলে এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া উপায় নেই। মূল সমস্যাটি হলো— অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ।
ভাত-রুটি ছাড়তে হবে না, শুধু ভারসাম্য জরুরি
পুষ্টিবিদ ডাঃ অঞ্জনা আশ্বস্ত করে বলেছেন, “আমরা কাউকে তাদের সাংস্কৃতিক খাবার পরিত্যাগ করতে বলছি না। প্লেটে পরিচিত খাবার থাকবে, তবে ভারসাম্যটাই মুখ্য।” ডাঃ অঞ্জনার পরামর্শ:
“ভাত বা রুটির পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে ডাল, দই, ডিম বা মাছের মতো প্রোটিনযুক্ত খাদ্য বাড়াতে হবে।”
ডাঃ বাসুদেবনের কথায়, ভাত, গম বা বাজরা—যে কোনও শস্যেই কার্বোহাইড্রেট বেশি। তাই সার্বিক বার্তাটি এক: শস্যের পরিমাণ কমিয়ে প্রোটিন বাড়ানো জরুরি, যা দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের জন্য উপকারী হবে।
আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে সম্মান জানিয়েই পরিবর্তন
ভারতের বহুবিধ রন্ধন সংস্কৃতি একটি একক “জাতীয় খাদ্য প্লেট” তৈরি করা কঠিন করে তোলে। যেমন, উত্তর-পূর্ব ভারতে মাছ ও মাংসের কারণে প্রোটিন গ্রহণ সবচেয়ে বেশি। আবার উত্তর ও পূর্ব ভারতে নির্ভরতা বেশি দুগ্ধজাত ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ওপর।
তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি জাতীয় খাদ্য নীতিতে আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে সম্মান জানাতে হবে, তবে সাধারণ পুষ্টি লক্ষ্য থাকবে— কম কার্বোহাইড্রেট, পরিমিত চর্বি এবং বেশি প্রোটিন। খাদ্য নির্বাচনে সাশ্রয়ী মূল্যের প্রভাব থাকায়, ডাঃ অঞ্জনা বলেন, “খাবারের ধরন নয়, বরং পরিমাণে ছোট পরিবর্তন আনা দরকার।”
স্বাস্থ্যকর ভারত গড়তে সরকারি উদ্যোগ চাই
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পথে অর্থনৈতিক বাস্তবতা একটি বড় বাধা। ডাল ও দুগ্ধজাত পণ্য পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হলেও দেশের সর্বত্র তা সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায় না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খাদ্যাভ্যাসে বাস্তব পরিবর্তন আনতে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। ডাঃ অঞ্জনা সরাসরি সরকারি রেশন ব্যবস্থায় ভর্তুকির বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।
ডাঃ অঞ্জনার পরামর্শ, “সরকারি রেশন ব্যবস্থায় যদি সাদা ভাত বা পরিশোধিত গমের পরিবর্তে ডাল ও স্বাস্থ্যকর তেলে ভর্তুকি দেওয়া যায়, তবে শহর ও গ্রাম উভয় স্তরের মানুষ তাদের বাজেট না বাড়িয়েই স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিতে পারবেন।”
সার্বিকভাবে বলা যায়, একটি সুস্থ জাতি গঠনে প্রয়োজন ‘এক প্লেটে একবারে’ ভাবনার বাস্তবায়ন—যেখানে প্রতিটি থালা শুধু পেট ভরাবে না, পুষ্টির ভারসাম্যও রক্ষা করবে।