ফোঁড়ার ব্যথা কমানোর ঘরোয়া ৫টি সহজ উপায়, দেখেনিন এখুনি

যেকোনো সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোঁড়া হতে পারে। তবে বর্ষাকালে ফোঁড়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর ফোঁড়ার ব্যথা সহ্য করা কতটা কষ্টকর তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানবেন! ফোঁড়া হলো একটি অঙ্গ বা টিস্যুর মধ্যে তৈরি হওয়া বা জমে থাকা পুঁজের গঠন। ফোড়া শরীরের যেকোনো অংশে হতে পারে, যেমন মুখম-লে, মুখে, দাঁতে, তাছাড়া কিডনি বা পেট ইত্যাদি অঙ্গগুলোতেও হতে পারে। তবে ত্বকের ফোঁড়াই হলো সবচেয়ে সাধারণ।

কেন ফোড়া হয় : ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য সূক্ষ্ম-জীব (মাইক্রো-অরগানিজম) যেমন- ভাইরাস, ছত্রাক এবং প্যারাসাইট দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে ফোঁড়া হয়ে থাকে। শরীরের কোন অঙ্গে বাইরের কোনো জীবাণু ঢুকেও ফোঁড়া সৃষ্টি করতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম; তাদের ফোঁড়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এইডস, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি ও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকার কারণে; তাদের ফোঁড়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে একজন সুস্থ ব্যক্তিরও ফোঁড়া হতে পারে। ভেতর দিকে বাড়তে থাকা চুলের ফলিকল সংক্রমিত হয়ে; এর চারপাশে একটি ফোঁড়ার সৃষ্টি করে। যাকে ফারাংকেল বা লোমফোঁড়া বা ফোস্কা বলা হয়। সাধারণত মুখ, ঘাড়, কাঁধ, বগল, নিতম্ব এসব স্থানে ফোঁড়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এর প্রধান লক্ষণ কী কী : ত্বকের ফোঁড়ার সাধারণ লক্ষণগুলো হলো লালচেভাব, ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং হলদেটে তরলে ভরা একটি ছোট ত্বকের ফুসকুড়ি। যদি আপনার অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর মধ্যে ফোঁড়া হয়ে থাকে, তবে তা থেকে সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। যেমন- ফুসফুসের মধ্যে ফোঁড়া হলে, ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সে ক্লান্তি অনুভব করে ও তার কাশি বেড়ে হয়। একইভাবে টনসিলের আশেপাশে একটি ফোঁড়া হলে, ব্যক্তি কথা বলার সময় এবং গেলার সময় ব্যথা পায়।

ঘরোয়া উপায়ে যেভাবে ফোড়ার ব্যথা কমাবেন :

১. গরম ভাঁপ : ফোড়ার স্থানে গরম ভাঁপ নিলে ওই স্থানে রক্ত সঞ্চারনের পরিমাণ বাড়বে। ফোড়ার ব্যথার শুরু থেকেই গরম ভাঁপ নেয়া শুরু করলে দ্রুত ব্যথা কমবে। প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট করে ৩-৪ বার ফোড়ার স্থানে গরম ভাঁপ নিন।

২. হলুদ গুঁড়ো : এতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এসব বৈশিষ্ট্য ফোঁড়ার ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি দেয়। এজন্য এক চা চামচ হলুদের গুঁড়োর সঙ্গে জল বা সামান্য দুধ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে ফোঁড়ার স্থানে ব্যবহার করলে উপকার মিলবে। প্রতিদিন অন্তত ৩ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

৩. ইপসোম লবণ : এই লবণের কার্যকারিতা অনেক। ফোঁড়ার ব্যথা এবং এটি শুকিয়ে যেতে সাহায্য করে লবণ। ফোঁড়ার পুঁজ শুকিয়ে নেয় ইপসোম লবণ। এজন্য গরম জলে ইপসোম লবণ মিশিয়ে ফোঁড়ার স্থানে কটনপ্যাডের সাহায্যে ব্যবহার করুন। দিনে অন্তত ৩ বার করে ২০ মিনিটের জন্য আক্রান্ত স্থানে এই লবণ জল ব্যবহার করুন।

৪. ক্যাস্টর অয়েল : সাধারণত চুল ঘন করতে ব্যবহৃত হয় ক্যাস্টর অয়েল। জানেন কি, এই তেলে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। যা ফোঁড়া সারাতে দুর্দান্ত কাজ করে। ফোঁড়া না পাকা অব্দি প্রতিদিন এই তেল ব্যবহার করুন। ব্যথামুক্ত থাকবেন এবং দ্রুত পেকে ফোঁড়ার ঘা শুকিয়ে যাবে।

৫. নিম তেল : এই তেলে আছে অ্যান্টি-সেপটিক, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যসমূহ। যা ফোঁড়াসহ ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। দিনে ৩-৪ বার নিম তেল ফোঁড়ার স্থানে ব্যবহার করলে ব্যথাও কমবে এবং ঘা শুকাবে দ্রুত।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন : দীর্ঘদিন ধরে যদি ফোঁড়ার ব্যথায় ভোগেন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। যদি আপনি ফোঁড়ার সংক্রমণ বা ইনফেকশন সন্দেহ করেন; তাহলে চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা বা ফোঁড়ার মাঝখান থেকে তরল নিয়ে কালচার করার নির্দেশও দিতে পারেন। শরীরের কোনো অঙ্গে একটি বড় ফোঁড়ার ক্ষেত্রে, চিকিৎসা হিসেবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিষ্কাশন করা যেতে পারে। রোগীকে অ্যানেস্থেশিয়া করে, চিকিৎসক ফোঁড়ার মুখ দিয়ে গর্ত করবেন; যাতে ফোঁড়ার ভিতরের উপাদানগুলো বের করে ফেলা যায়। সংক্রমণটি পুরোপুরি পরিষ্কার করার জন্য সেই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকও দেওয়া হয়। চেরা ও নিষ্কাশন (ফোঁড়া থেকে তরল বের করে দেওয়া) ব্যবস্থার প্রচলিত সার্জারির মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়। চিকিৎসক শরীরের অংশ এবং ফোঁড়ার আকারের ওপর ভিত্তি করে সার্জারি করেন।bs

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy