প্রথমবার নয়, পরেও কি সহবাসে যন্ত্রণা হয়? জানুন বিস্তারিতভাবে

সহবাস কেবল জৈবিক চাহিদা পূরণ বা প্রজননের মাধ্যম নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক সুখেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তবে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি অনেকের কাছেই অস্বস্তির কারণ হতে পারে, বিশেষত যৌনতা এবং যৌনরোগ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে দ্বিধা বোধ করার কারণে। সঠিক জ্ঞানের অভাবে এবং লুকোছাপার প্রবণতায় বহু মানুষ যৌন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন এবং ভুল চিকিৎসার কারণে কঠিন রোগ এমনকি মৃত্যুর মুখেও পড়েন। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যৌনতা নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও রোগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমবার যৌনমিলনের সময় নারীদের যোনিদ্বারে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক এবং তা ধীরে ধীরে সেরে যায়। তবে এই ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা চিন্তার কারণ। যন্ত্রণাদায়ক যৌনসঙ্গম ‘ডিসপারেউনিয়া’ রোগের লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্ত হলে যৌনমিলনে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যার ফলে যৌনতার প্রতি আগ্রহ কমে যায় এবং দাম্পত্য জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই রোগ শুধু নারীদের নয়, পুরুষদেরও হতে পারে। সহবাসের আগে, চলাকালীন এবং পরেও এই যন্ত্রণা শুরু হতে পারে। লুব্রিকেশনের অভাব, ত্বকের সংক্রমণ, অসুস্থতা, অপারেশন, মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা অবসাদের কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডিসপারেউনিয়ার প্রকারভেদ:

যন্ত্রণার স্থানের ভিত্তিতে ডিসপারেুনিয়া সাধারণত দুই প্রকারের হয়:

প্রবেশের সময় ব্যথা (সুপারফিশিয়াল ডিসপারেউনিয়া): এক্ষেত্রে পেনিট্রেশনের সময় যোনিতে ব্যথা অনুভূত হয়। সাধারণত লুব্রিকেশনের অভাব, আঘাত বা সংক্রমণের কারণে এই ব্যথা হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত যন্ত্রণা (কোলিশন ডিসপারিউনিয়া): এই ব্যথা গভীরভাবে পেনিট্রেশনের সময় অনুভূত হয় এবং তলপেটে ব্যথা হতে পারে। সহবাসের নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা কোনো অপারেশনের পর সহবাসের কারণে এই ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ব্যথার কারণ:

যোনিতে লুব্রিকেশনের অভাব ডিসপারিউনিয়ার প্রধান কারণ হলেও এর আরও অনেক কারণ থাকতে পারে:

গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, হারপিসের মতো যৌনরোগ বা সংক্রমণ।
মেনোপজের কারণে যোনিদ্বারে শুষ্কতা ও ব্যথা।
যৌন উত্তেজনা কমে গেলে সহবাসের সময় যন্ত্রণা।
স্ত্রীদেহে যোনির পেশি অতিরিক্ত কঠিন হলে।
বংশগত কারণে কোনো অসুস্থতা বা অ্যালার্জি।
নির্দিষ্ট কনডম, সাবান বা শ্যাম্পুর কারণে সংক্রমণ।
পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনরোগ ছাড়াও যৌনাঙ্গের পেশির কাঠিন্য।
যৌনাঙ্গে আঘাত লাগলে।
প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ বেড়ে গেলে।
যৌন উত্তেজনা বা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বীর্যপাত না হলে।
রোগের লক্ষণ:

সহবাসের সময় যোনি, পুরুষাঙ্গ বা তলপেটে যন্ত্রণা।
ব্যথার পাশাপাশি জ্বালাভাব, অস্বস্তি বা চুলকানি।
যৌনসঙ্গমের পর যৌনাঙ্গ সংকুচিত হয়ে যাওয়া।
সহবাসের সময় অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করা।
গভীরভাবে পেনিট্রেশনের সময় ব্যথা অনুভব করা।
চিকিৎসা:

যৌনরোগ বা তার উপসর্গ নিরাময়ের কোনো ঘরোয়া টোটকা নেই। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শই একমাত্র সমাধান। সমস্যা হলে লজ্জা না পেয়ে বিশেষজ্ঞের কাছে যান এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।

ডিসপারেউনিয়ার চিকিৎসা রোগের লক্ষণ ও কারণের উপর নির্ভর করে। শারীরিক কারণে এই রোগ হলে অনেক সময় ওষুধেই কাজ হয়। তবে মানসিক কারণে সমস্যা হলে তার জন্য আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন। পেশির সমস্যা থাকলে যোগাসনের মাধ্যমে উপকার পাওয়া যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করতে হবে।

বাড়িতে বসে কিছুটা আরাম পেতে চাইলে মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন। লুব্রিকেশনের অভাব হলে ওয়াটার বেস বা সিলিকন বেস লুব্রিকেটর ব্যবহার করুন। সহবাসের পর স্থানটি বরফ বা জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

ডিসপারিউনিয়া ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা করালে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে দীর্ঘদিন ধরে রোগ চেপে রাখলে এর ফল মারাত্মক হতে পারে। তাই কোনো রকম অস্বস্তি অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy