পিরিয়ডের সময়টা অধিকাংশ নারীর জন্যই বেশ কষ্টকর। গ্যাস্ট্রিক, বমি ভাবের পাশাপাশি তীব্র পেট ব্যথা এই সময়কার নিত্যসঙ্গী। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে শরীরে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে ওষুধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে, শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জেনে নিন পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে কোন ধরনের খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করবেন:
১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার:
মাসিকের সময় শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার কারণে নারীদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে ক্লান্তি ও আলস্য অনুভূত হয়। শরীরে আয়রনের অভাব থাকলে পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা এবং দুর্বলতা বাড়ে। তাই প্রতিদিনের খাবারে সবুজ শাক-সবজি, বেদানা, খেজুর এবং বিটের মতো আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখা জরুরি।
২. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে তা শরীর থেকে বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ সহজে বের করে দিতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে এটি শরীরে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ অপসারণের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে। ফলে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও, এটি অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যাও দূর করতে সহায়ক।
৩. তুলসি পাতা:
তুলসি পাতা একটি অত্যন্ত উপকারী ভেষজ। এতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন থাকে। এই পাতা পিএমএস (প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম) উপশমেও সাহায্য করে। তুলসি পাতা খেলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মাসিক চক্র নিয়মিত করতেও সাহায্য করে। তাই পিরিয়ডে পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত তুলসি পাতার রস খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৪. ঘি:
ঘি-এর রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। সুন্দর গন্ধ ও স্বাদের জন্য এটি অনেকের কাছেই প্রিয়। পিরিয়ডের সময়ে প্রতিদিনের খাবারের সাথে এক চা চামচ ঘি মিশিয়ে খান। এতে পিরিয়ড সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর হবে এবং আরও অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে।
৫. হলুদ:
হলুদে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টধর্মী উপাদান রয়েছে। এটি পিরিয়ডের সময় হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টিস্পাসমোডিক ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পিরিয়ড এবং পিএমএস-এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। হলুদ ও আদার মিশ্রণ খেলে তা মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এক চা চামচ হলুদ এবং এক টেবিল চামচ আদা জলে ফুটিয়ে হালকা গরম অবস্থায় পান করুন।
৬. পর্যাপ্ত জল:
পর্যাপ্ত জল পানের কোনো বিকল্প নেই। শরীরে জলের ঘাটতি না থাকলে যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক সহজ হয়ে যায়। পিরিয়ডের সময়ে অনেকের ক্ষেত্রে পেট ফাঁপা বা পেট ফোলার মতো সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা কমাতে পর্যাপ্ত জল পান করা উচিত। হালকা গরম জল পান করলে তা পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা কমাতে বিশেষভাবে কাজ করে।
৭. ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:
ম্যাগনেশিয়াম নামক উপকারী উপাদানটি জরায়ুর পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। ফলে পিরিয়ডের সময়ে পেটে ব্যথা কমে। তাই পিরিয়ডে পেটে ব্যথা এড়াতে ডার্ক চকোলেট, অ্যাভোকাডো, ছোলা, মটর, টোফু এবং বিভিন্ন দানা শস্যের মতো ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
ওষুধের পরিবর্তে এই প্রাকৃতিক খাবারগুলো আপনার পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে এবং শরীরে কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করবে না।