রাতারাতি কেউ নিজের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে ওঠে না। এটি আসলে ছোট ছোট কিছু অভ্যাসের সমষ্টি, যা নীরবে আমাদের সুখ এবং সমৃদ্ধিকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিতে পারে। আমরা প্রায়শই বুঝতেও পারি না যে আমরা নিজেরাই নিজেদের কতটা ক্ষতি করছি। কিছু অভ্যাস আমাদের মানসিক শক্তি নিঃশেষ করে ফেলে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক সেই কাজগুলো, যা করার মাধ্যমে আপনি নিজেই নিজের ক্ষতি করছেন:

১. জীবনকে প্রতিযোগিতা ভাবা:

আপনি কি প্রায়শই নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করেন? অন্যদের সহযোগিতা করার পরিবর্তে প্রতিযোগিতাকে বেছে নেন? এই অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে আপনাকে নিঃশেষ করে দেবে। মনে রাখবেন, জীবন কোনো প্রতিযোগিতা নয়। জীবনের সত্যিকারের পূর্ণতা আসে ঐক্য এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে। অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত না হয়ে তাদের থেকে শিখুন এবং নিজের পথে এগিয়ে যান।

২. বাহ্যিক চাকচিক্যকে সুখের মাপকাঠি করা:

একটি মোটা মাইনের চাকরি, জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের ফটোশুট অথবা দামি সম্পত্তির মতো বস্তুগত বিষয়গুলোকে সুখের একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে ধরা নিজের ক্ষতি করারই নামান্তর। জীবনে এই ধরনের অবাস্তব প্রত্যাশা দীর্ঘস্থায়ী অসন্তোষের জন্ম দেয়। পরিবর্তে, বাস্তববাদী হতে শিখুন এবং সবকিছু নিখুঁত হবে এমন একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন না দেখে মানুষ এবং জিনিসগুলোকে তাদের নিজস্ব রূপে গ্রহণ করুন। ভেতরের শান্তি এবং সন্তুষ্টির দিকে মনোযোগ দিন।

৩. পুরনো ক্ষতে আঁকড়ে থাকা:

অতীতের অভিযোগ, বিষাক্ত সম্পর্ক এবং জমে থাকা রাগ পুষে রাখা এবং সেই পুরনো আবেগগুলোকে বর্তমানের উপর প্রাধান্য দেওয়া নিজের ক্ষতি করার একটি নিশ্চিত উপায়। ক্রমাগত অতীতের ব্যথার পুনরাবৃত্তি আপনাকে জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে বাধা দেবে। ক্ষমা করতে শিখুন এবং অতীতকে পিছনে ফেলে নতুন করে শুরু করার সাহস রাখুন।

৪. নিজের সব ভাবনাকে অভ্রান্ত মনে করা:

নিজের প্রতিটি বিশ্বাস এবং চিন্তাকে безоঙ্কুশ সত্য মনে করার কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া স্বাভাবিক। মনে রাখবেন, আপনি আপনার মনের পর্যবেক্ষক, এর দাস নন। তাই আপনার ভেতরের সমস্ত কথোপকথনকে সঠিক বলে ধরে নেবেন না। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সময় নিন, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করুন এবং প্রয়োজনে অন্যের পরামর্শ নিন। তাড়াহুড়ো করে এবং শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না।

৫. দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া:

নিজের সমস্যার জন্য সর্বদা অন্যদের বা পরিবেশকে দোষারোপ করা এবং নিজের পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া আসলে নিজের ক্ষতি করারই লক্ষণ। অজুহাতকে আপনার নিষ্ক্রিয়তার কারণ হতে দেবেন না। বরং নিজের জীবনের দায়িত্ব নিন এবং পরিবর্তন আনার জন্য সক্রিয় হন। নিজের ভুল স্বীকার করতে শিখুন এবং সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হন।

এই অভ্যাসগুলো আপাতদৃষ্টিতে ছোট মনে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এগুলো আপনার মানসিক শান্তি, ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক সুখের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সচেতন হন এবং আজ থেকেই এই ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো ত্যাগ করার প্রতিজ্ঞা নিন। মনে রাখবেন, নিজের সেরা বন্ধু হওয়াটাই সুখী জীবনের প্রথম পদক্ষেপ।