বন্ধু, আত্মীয় বা সহকর্মীকে টাকা ধার দেওয়া সহজ, কিন্তু সেই টাকা ফেরত পাওয়া অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ঋণগ্রহীতা যদি সত্যিই আর্থিক সংকটে থাকেন, তবে তাকে সময় দেওয়া বা ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষমা করে দেওয়া মানবিকতার পরিচয়। তবে যদি এমন হয় যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে টাকা ফেরত দিচ্ছেন না, তখন কিছু কৌশলী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে সম্পর্ক বজায় রেখে কীভাবে আপনার ন্যায্য পাওনা উদ্ধার করবেন, তা জেনে নিন:
১. স্পষ্টভাবে কথা বলুন:
আপনার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য সরাসরি ঋণগ্রহীতার সঙ্গে কথা বলুন। শান্তভাবে ব্যক্তিগতভাবে অথবা ফোনে আপনার উদ্বেগের কথা জানান। প্রয়োজনে মেসেজেও আপনার অনুরোধ জানাতে পারেন। অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে বা ভুলে যাওয়ার ফলে ধার নেওয়া টাকা বা জিনিস ফেরত দেওয়া হয় না। তাই ভদ্রভাবে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। আপনি ঠিক কত টাকা বা কোন জিনিস ধার দিয়েছিলেন এবং কবে দিয়েছিলেন, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। একইসাথে, কখন আপনি সেটি ফেরত পেতে চান, সে সম্পর্কে আপনার প্রত্যাশা জানান। আপনার বলার ধরণ যেন বন্ধুত্বপূর্ণ হয় এবং কোনো প্রকার ঝগড়া বা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না করে।
২. সময়সীমা নির্দিষ্ট করুন:
যদি ঋণগ্রহীতা আপনাকে টাকা পরিশোধের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি তাকে একটি সুস্পষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে পারেন। ভদ্রভাবে তাকে জানান যে কেন আপনার নির্দিষ্ট তারিখে সেই অর্থ বা জিনিস ফেরত পাওয়া প্রয়োজন। তার যদি সদিচ্ছা থাকে, তবে এই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই তিনি আপনার ধার পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন।
৩. কিস্তিতে পরিশোধের প্রস্তাব:
যদি ঋণগ্রহীতা একবারে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন, তবে আপনি তাকে কিস্তিতে টাকা পরিশোধের প্রস্তাব দিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি দশ হাজার টাকা পান, তবে তিনি প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে পাঁচ মাসে সেই অর্থ ফেরত দিতে পারেন। কিছুটা নমনীয়তা দেখালে হয়তো ঋণগ্রহীতার জন্য সুবিধা হবে এবং আপনার টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
৪. লিখিতভাবে রাখুন (বড় অঙ্কের ক্ষেত্রে):
যদি বড় অঙ্কের অর্থ বা মূল্যবান কোনো সম্পদ ধার দেন, তবে একটি লিখিত ঋণপত্র তৈরি করা বুদ্ধিমানের কাজ। পরিশোধের শর্তাবলী, সময়সীমা এবং সেই সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে কোনো জরিমানা ধার্য হবে কি না, তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করে একটি প্রাথমিক চুক্তি করুন। চুক্তিটিকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার জন্য উভয় পক্ষের স্বাক্ষর থাকা জরুরি। এই লিখিত নথি একটি সুস্পষ্ট অনুস্মারক হিসেবে কাজ করবে এবং ঋণগ্রহীতাকে আরও দায়িত্বশীল হতে উৎসাহিত করবে। ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হলে এটি প্রমাণ হিসেবেও কাজে দেবে। এই পদ্ধতিটি আনুষ্ঠানিক হলেও, এটি ঋণগ্রহীতাকে ঋণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করবে।
৫. আইনি পথে পদক্ষেপ (শেষ অবলম্বন):
উপরের কোনো উপায়েই যদি টাকা ফেরত পাওয়া না যায়, তবে আইনি পথে পদক্ষেপ নেওয়া শেষ বিকল্প হতে পারে। তবে এটি করার আগে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ছোট অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে আইনি পথে যাওয়া সময় ও অর্থের অপচয় হতে পারে। তবে বড় অঙ্কের ক্ষেত্রে এবং যখন অন্য কোনো উপায় কাজ না করে, তখন আইনি পদক্ষেপ আপনার ন্যায্য পাওনা উদ্ধারে সহায়ক হতে পারে। তবে এই পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
টাকা ধার দেওয়া এবং তা ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেক সময় জটিল হতে পারে। তবে ধৈর্য ধরে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলে সম্পর্ক বজায় রেখেও আপনার পাওনা উদ্ধার করা সম্ভব।