বিদেশি হলেও ড্রাগন ফল এখন আমাদের দেশের বাজারে বেশ পরিচিত। এর নজরকাড়া রঙ আর অদ্ভুত গঠন দেখে অনেকেই হয়তো থমকে যান, আর দামটা তো একটু বেশিই! কিন্তু জানেন কি, এই ‘ফ্যান্সি’ ফলটির স্বাস্থ্য উপকারিতা এতটাই চমকপ্রদ যে একে আধুনিক সময়ের এক ‘সুপারফুড’ বলা চলে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের সেই জাদুকরী স্বাস্থ্যগুণগুলো, যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
পুষ্টির এক রঙীন ভান্ডার: ড্রাগন ফল আপনার প্লেটে কী আনছে?
একটি মাঝারি ড্রাগন ফলে মাত্র ৬০ ক্যালরি থাকলেও, এটি পুষ্টির এক বিপুল ভান্ডার। এতে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড। এছাড়াও, বিটা ক্যারোটিন ও লাইকোপিনের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও এই ফলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিটা ক্যারোটিন আপনার শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে ত্বক, চোখ ও ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি ঘটায়।
ড্রাগন ফলের ৬টি অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১. কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি: একটি ড্রাগন ফলে প্রায় ৭ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা আপনার দৈনিক সুপারিশকৃত পরিমাণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এই বিপুল পরিমাণ ফাইবার অন্ত্রের বর্জ্য দূরীকরণে সহায়তা করে এবং যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা রয়েছে, তারা এই ফল খেলে অসামান্য উপকার পেতে পারেন। এর হালকা স্বাদ এটিকে সালসা, ফ্রুট সালাদ বা স্মুদিতে যোগ করার জন্য আদর্শ করে তোলে।
২. হৃদয়ের বন্ধু, বিষণ্নতার মুক্তিদাতা: ড্রাগন ফলের বীজে হার্টের জন্য উপকারী ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। নিউ ইয়র্কের পুষ্টিবিদ কেরি গানস বলেন, “ড্রাগন ফলের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে। একারণে এই ফল খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি ও জয়েন্টের ব্যথা কমে যায়।” চমকপ্রদ তথ্য হলো, ড্রাগন ফল খেলে বিষণ্নতাও কমতে পারে!
৩. হাড়ের সুরক্ষাকবচ: অন্যান্য অধিকাংশ ফলের চেয়ে ড্রাগন ফলে ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে। এই ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের ভঙ্গুরতা) প্রতিরোধে সাহায্য করে। এক বাটি ড্রাগন ফলে দৈনিক সুপারিশকৃত ম্যাগনেসিয়ামের প্রায় ১৮ শতাংশ পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাসিক চক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে এমন নারীদের হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ড্রাগন ফল বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে।
৪. রক্ত সঞ্চালনে জাদুর ছোঁয়া: বিশ্বের একটি অতি পরিচিত পুষ্টি ঘাটতি হলো আয়রনের ঘাটতি, যা নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। মাংস, মাছ, বাদাম ও ডাল জাতীয় খাবার থেকে আমরা অধিকাংশ আয়রন গ্রহণ করি। কিন্তু কিছু ফলও উচ্চ পরিমাণে আয়রন ধারণ করে, যার মধ্যে ড্রাগন ফল অন্যতম। ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ১.৯ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে, যা দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রার ১০ শতাংশেরও বেশি। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আয়রন প্রয়োজন, যা শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন পৌঁছাতে লোহিত রক্তকণিকাকে সাহায্য করে।
৫. চুলপড়া প্রতিরোধক: আয়রন ঘাটতির কারণে চুলপড়া সমস্যাও দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে চুলপড়া কমতে পারে। আইকান স্কুল অব মেডিসিনের ডার্মাটোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্লিনিক্যাল প্রফেসর গ্যারি গোল্ডেনবার্গ জানান, এই ফল আয়রন ঘাটতি জনিত রক্তস্বল্পতার অন্যান্য উপসর্গও প্রশমিত করতে পারে, যেমন- অত্যধিক ক্লান্তি, ত্বকের বিবর্ণতা, মনোনিবেশে সমস্যা, মাথাব্যথা ও হাত-পায়ে ঠান্ডা অনুভূতি।
৬. ইমিউন সিস্টেমের শক্তিশালী বর্ম: ভাইরাস সংক্রমণে আমরা সাধারণত কমলার মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের দিকে ঝুঁকে পড়ি। কিন্তু ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বাড়াতে আপনার ডায়েটে ড্রাগন ফলকেও রাখতে পারেন। এতেও প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। বেথ ওয়ারেন নিউট্রিশনের প্রতিষ্ঠাতা বেথ ওয়ারেন বলেন, “অক্সিডেটিভ স্ট্রেস জনিত ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রয়োজন তা ফল ও শাকসবজিতে রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের একটি প্রাচুর্যপূর্ণ উৎস হলো ড্রাগন ফল।”
সুতরাং, এবার থেকে ড্রাগন ফল কেনার আগে এর দাম নিয়ে দু’বার ভাববেন না। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনার বিনিয়োগের চেয়ে অনেক বেশি কিছু ফিরিয়ে দেবে। আপনার ডায়েটে এই রঙীন ফলটিকে অন্তর্ভুক্ত করে আপনিও পেতে পারেন সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবন!