বর্তমান যুগে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু শিশুদের কাছে এই প্রযুক্তি এখন এক মারাত্মক আসক্তির কারণ। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে চরম উদ্বেগে রয়েছেন। পড়াশোনা থেকে শুরু করে বাইরের খেলাধুলা পর্যন্ত সবকিছুই এখন মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে সীমাবদ্ধ। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এই আসক্তি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে শিশুদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। এর ফলে মাথাব্যথা, মাইগ্রেন এবং পেশিতে ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে শিশুরা খাওয়ার সময়ও মোবাইল দেখতে থাকে, তাদের মধ্যে আচমকা ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ।
মনোবিদরা সতর্ক করছেন যে, ৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখা জরুরি। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য সংবেদনশীলতা এবং চিন্তাশক্তির বৃদ্ধি অপরিহার্য, যা মোবাইলের আসক্তি নষ্ট করে দেয়।
আসক্তি দূর করার উপায়:
শিশুদের মোবাইলের নেশা হঠাৎ করে ছাড়ানো কঠিন। অনেক সময় তারা জেদ করে বা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে ধৈর্য ধরে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনুন: শিশুদের আউটডোর গেমসে বা বন্ধুদের সাথে বাইরে খেলতে উৎসাহিত করুন। এতে তাদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়বে এবং সামাজিক মেলামেশা উন্নত হবে।
টাইমটেবিল তৈরি: নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলার অভ্যাস তৈরি করুন। পড়াশোনা, খেলা এবং বিনোদনের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করে দিন।
সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করুন: অবসর সময়ে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে হাতের কাজ, ছবি আঁকা, বাদ্যযন্ত্র শেখা ইত্যাদি সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করুন।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করুন, কারণ বেশি রাত জাগা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তাদের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে সবুজ শাক-সবজি অন্তর্ভুক্ত করুন।
জাঙ্ক ফুড এবং কোল্ড ড্রিঙ্কসের বদলে লস্যি বা তাজা ফলের রস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধ পান করালে তা ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
শিশুদের প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানো জরুরি, তবে তার আগে তাদের সুস্থ শৈশব নিশ্চিত করা প্রতিটি বাবা-মায়ের প্রধান দায়িত্ব। মোবাইলের আসক্তি থেকে বেরিয়ে এসে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করার জন্য পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।