কেন ভয়ংকর স্মৃতি সহজে ভোলা যায় না? এর কারণ জানুন একনজরে

জীবনে সুখ-দুঃখের আনাগোনা লেগেই থাকে। আনন্দের মুহূর্তগুলো হয়তো দ্রুত ফুরিয়ে যায়, কিন্তু কঠিন বা বিপজ্জনক কোনো ঘটনা জীবনের সমস্ত আনন্দকে ম্লান করে দিতে যথেষ্ট। অনেক সময়, জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো খারাপ স্মৃতির বোঝা নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হয়।

সুখের স্মৃতিগুলো হয়তো তেমনভাবে আপনাকে স্মৃতিকাতর করে না, তবে ভয়ংকর বা বেদনাদায়ক কোনো স্মৃতি যেন আজীবন মনের গভীরে গেঁথে থাকে। চাইলেও সেইসব তিক্ত অভিজ্ঞতা সহজে ভোলা যায় না। কিন্তু কেন এমন হয়? সম্প্রতি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

তুলেন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টাফটস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা এর মূল কারণ উদঘাটন করেছেন। তারা আমাদের মস্তিষ্কের সংবেদনশীল কেন্দ্র – অ্যামিগডালা – তে ভীতিকর স্মৃতির গঠন এবং এর পেছনের প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রেস নিউরোট্রান্সমিটার নরপাইনফ্রাইন মস্তিষ্কের অ্যামিগডালার প্রতিরোধক নিউরনকে উদ্দীপিত করে মস্তিষ্কে ভয় প্রক্রিয়াকরণের সংকেত পাঠায়। এর ফলে বৈদ্যুতিক স্রাবের পুনরাবৃত্তিমূলক বিস্ফোরণ প্যাটার্ন তৈরি হয়। এই বিস্ফোরণের প্যাটার্ন অ্যামিগডালার মস্তিষ্কের তরঙ্গের দোলনের ফ্রিকোয়েন্সি বিশ্রাম অবস্থা থেকে উত্তেজিত অবস্থায় পরিবর্তন করে, যা ভয়ের স্মৃতি তৈরিতে প্ররোচনা যোগায়।

তুলেন সেল ও আণবিক জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক জেফরি টাস্কার, যিনি নিউরোসায়েন্সের ক্যাথরিন ও হান্টার পিয়ারসন চেয়ারের অধিকারী, এই প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন কেউ আপনাকে বন্দুকের মুখে ধরে, তখন আপনার মস্তিষ্ক একগুচ্ছ স্ট্রেস নিউরোট্রান্সমিটার নোরপাইনফ্রিন নিঃসরণ করে, যা অ্যাড্রেনালিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই নোরপাইনফ্রিন অ্যামিগডালার মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট সার্কিটে বৈদ্যুতিক নিঃসরণের প্যাটার্ন পরিবর্তন করে। এর ফলে মস্তিষ্ক একটি উচ্চতর উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। এই পরিবর্তিত অবস্থা স্মৃতি গঠনকে সহজ করে তোলে এবং সেই স্মৃতি ভয়-মিশ্রিত হয়, কারণ ঘটনাটি ভীতিকর ছিল।’

এই গবেষণা ভয়ংকর স্মৃতি কেন আমাদের মন থেকে সহজে মুছে যায় না, তার একটি সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করে। স্ট্রেস নিউরোট্রান্সমিটারের প্রভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতার পরিবর্তনই এর মূল কারণ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy