সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এ কথা কমবেশি সকলেই জানেন। সিগারেটের প্যাকেটের গায়েও এর ক্ষতিকর দিকগুলো উল্লেখ করা থাকে। তবে সচেতনতা তেমন না বাড়ায় ধূমপায়ীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যারা একবার এই অভ্যাস শুরু করেন, তাদের পক্ষে এটি ত্যাগ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বহু চেষ্টা করেও অনেক সময় লাভ হয় না। তবে যারা সত্যিই সিগারেট ছাড়তে বদ্ধপরিকর, তাদের জন্য কিছু খাবার সহায়ক হতে পারে।
চিকিৎসক ও মনোবিদদের মতে, সিগারেট ছাড়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তি। তবে এর পাশাপাশি কিছু সহায়ক উপাদানেরও প্রয়োজন। সিগারেট ছাড়ার পর শরীরে ও মনে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। এই সময় খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলে নিকোটিন উইথড্রয়াল সিম্পটম মোকাবিলা করা এবং সিগারেটের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ভুলে থাকা সম্ভব।
জেনে নিন, সিগারেট ছাড়ার পর কোন খাবারগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে:
চুইংগাম:
মিন্টের স্বাদ নিকোটিনের আসক্তি কমাতে সহায়ক। তাই যারা সিগারেট ছাড়তে চান, তারা সবসময় মিন্ট ফ্লেভারের চুইংগাম সঙ্গে রাখতে পারেন। বাজারে নিকোটিন গাম পাওয়া গেলেও, ধোঁয়া এড়িয়ে কার্বন মনোক্সাইডের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে অনেকেই এটি বেছে নেন। তবে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এর পরিবর্তে মিন্ট ফ্লেভারের চুইংগাম চিবানো ভালো বিকল্প।
মৌরি:
দিনের কোন সময়ে আপনি সাধারণত সিগারেট খেতেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এরপর সিগারেট খাওয়ার সময়টিতে কয়েক দানা মৌরি মুখে দিন। তবে অতিরিক্ত মৌরি খাওয়া উচিত নয়। মৌরি সবসময় সঙ্গে রাখুন, কিন্তু পরিমিত পরিমাণে খান। কারণ যেকোনো মসলা আমাদের স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে এবং সেই মসলার প্রতি আসক্তি তৈরি করতে পারে, যা শরীরের জন্য মোটেও উপকারী নয়।
টক জাতীয় ফল ও ড্রাই ফ্রুটস:
টক জাতীয় ফল যেমন কমলা ও লেবুতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি-এর অ্যান্টি-টক্সিন ক্ষমতা শরীরকে দূষণমুক্ত করে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে এবং নিকোটিনের খারাপ প্রভাব কমায়। অন্যদিকে, ড্রাই ফ্রুটসে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে। এটি খেলে শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ে, ফলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরের শারীরিক ও মানসিক চাপ সামলানো সহজ হয়।
জল:
সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার পর এর তীব্র আকাঙ্ক্ষা কমাতে জল অত্যন্ত উপকারী। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে জল পান করা জরুরি। জল আমাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে। সিগারেট ছাড়ার পরে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, নিয়মিত জল পানের অভ্যাসের মাধ্যমে তা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তবে এই সময় ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে শরীরের জলের চাহিদা বাড়ে। শরীর শুষ্ক হলে স্নায়ু ও পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ফলে আবারও সিগারেটের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হতে পারে।
সিগারেট ত্যাগ করা একটি কঠিন প্রক্রিয়া, তবে নিজের দৃঢ় সংকল্প এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। উপরোক্ত খাবারগুলো সিগারেট ছাড়ার যাত্রায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে এবং নিকোটিনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ভুলিয়ে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।