বিশ্বজুড়ে কম বয়সে অকালমৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যার অন্যতম প্রধান কারণ অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রকাশিত এক তথ্যে এই বিষয়টি সামনে এসেছে। রান্নার সময় পরিমিত লবণ ব্যবহার করা হলেও, খাওয়ার সময় পাতে অতিরিক্ত লবণ নেওয়ার অভ্যাস মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
অতিরিক্ত সোডিয়ামের বিপদ:
সোডিয়াম শরীরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হলেও, অত্যাধিক পরিমাণে এটি শরীরে প্রবেশ করলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে হৃদরোগের প্রকোপ বাড়ছে, এবং কম বয়সে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনাও বাড়ছে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, ফাস্ট ফুডের প্রতি ঝোঁক এবং শরীরের প্রতি অবহেলা এর কারণ হলেও, শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম প্রবেশকেও একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সমীক্ষা ও নির্দেশিকা:
লবণ হলো সোডিয়ামের অন্যতম প্রধান উৎস। ‘ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ২৪ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, দিনে পাঁচ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়। তবে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসে প্রতিদিন ১১ গ্রামের বেশি লবণ থাকে, যা অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কম সোডিয়াম যুক্ত লবণ কি সমাধান?
অনেকেই রোগের হাত থেকে বাঁচতে কম সোডিয়ামযুক্ত লবণ ব্যবহার করেন। পুষ্টিবিদরা বলছেন, পরিমিত মাত্রায় এটি গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে সমস্যা হলো, স্বাদ বাড়ানোর জন্য অনেকেই এই ধরনের লবণও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করেন, যার ফলে লাভের লাভ কিছুই হয় না।
পুষ্টিবিদদের মতে, যেসব লবণে সোডিয়াম কম থাকে, সেগুলোতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। যদিও পটাশিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে যেকোনো খনিজই শরীরে বেশি মাত্রায় জমতে থাকলে সমস্যা বাড়াতে পারে। শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম কিডনির ওপর প্রভাব ফেলে। তাই কিডনির সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের কম সোডিয়ামযুক্ত লবণ ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অকালমৃত্যু কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি, বিশেষ করে লবণের ব্যবহার কমানো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা এবং পুষ্টিবিদদের পরামর্শ মেনে পরিমিত লবণ গ্রহণ করে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।