ফ্লার্ট—এই শব্দবন্ধটি নিয়ে অনেকের মনেই ধোঁয়াশা রয়েছে। এর সরাসরি বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজে পাওয়াও বেশ কঠিন। কাছাকাছি কিছু শব্দ থাকলেও, তা ব্যবহার করতে অনেকেই দ্বিধা বোধ করেন। তবে, যখন মনের সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে মানুষ নতুন সম্পর্কের দিকে পা বাড়ায়, তখন কখনও তা ফ্লার্টিংয়ের হালকা স্পর্শ নিয়ে শুরু হয়, আবার কখনও পরিণতি পায় গভীর প্রেমে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ফ্লার্ট করা আসলে একটি অভিনয়, একটি খেলা অথবা মনের সাথে এক ধরনের লুকোচুরি। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, খেলাচ্ছলে প্রেমের ভান করা। তবে এর উল্টো পিঠও রয়েছে। তাদের মতে, মাঝে মাঝে হালকা ফ্লার্ট মন ও শরীরের জন্য নাকি দারুণ উপকারী।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক ফ্লার্টিং সত্যিই আমাদের মন এবং শরীরের উপর কেমন প্রভাব ফেলে:
স্ট্রেস কমায়:
‘অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার অ্যান্ড হিউম্যান ডিসিশন প্রসেসেস’-এর একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। গবেষণাটি বলছে, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে হালকা ফ্লার্ট কর্মীদের মানসিক চাপ এবং কাজের উত্তেজনা কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে, গবেষকরা একই সাথে সতর্ক করেছেন, এই ফ্লার্টিং যেন কোনোভাবেই যৌন হয়রানির পর্যায়ে না পৌঁছায়। একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং হালকা ফ্লার্টের পরিবেশ কাজের চাপ কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে:
মানসিক চাপের সময়ে আমরা অনেক সময় দুর্বল বোধ করি। ফ্লার্ট করা সেই মুহূর্তে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। যখন আপনি অন্যদের সাথে ফ্লার্ট করেন এবং তারা ইতিবাচক সাড়া দেয়, অথবা যখন তারা সরাসরি আপনার সাথে ফ্লার্ট করে, তখন আপনি অনুভব করেন যে আপনি অন্যের মনোযোগের যোগ্য এবং আকর্ষণীয়। এই অনুভূতি আপনাকে ভাবতে শেখায় যে আপনি একজন মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
মুখের অভিব্যক্তিই মূল সংকেত:
‘দ্য জার্নাল অফ সেক্স রিসার্চ’-এর একটি গবেষণা অনুসারে, বেশিরভাগ পুরুষই মহিলাদের মুখের অভিব্যক্তিকে ফ্লার্ট করার প্রধান লক্ষণ হিসেবে গণ্য করেন। চোখের সরাসরি চাহনি, বিশেষ কোনো অঙ্গভঙ্গি অথবা আন্তরিকভাবে বলা একটি সুন্দর কথা—এগুলো মূলত ফ্লার্টিংয়ের সূক্ষ্ম সংকেত। এই অverbal কিউগুলোই অনেক সময় সম্পর্কের প্রাথমিক ধাপের ইঙ্গিত বহন করে।
যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ায়:
যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরই সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়, বিশেষ করে যখন কোনো মতবিরোধ বা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ফ্লার্টিংয়ের মাধ্যমে মানুষ অনানুষ্ঠানিক এবং হালকা পরিবেশে যোগাযোগ স্থাপন করতে শেখে। এটি শুধু সম্পর্ককে মজবুতই করে না, বরং একে অপরের চিন্তাভাবনা এবং ভুল বোঝাবুঝির নিরসনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফ্লার্টিংয়ের সময় মানুষ নিজেদের আবেগ এবং অনুভূতি প্রকাশ করতে শেখে, যা পরবর্তীকালে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে কাজে আসে।
সুতরাং, ফ্লার্টিং কেবল একটি হালকা খেলা বা প্রেমের ভান নয়। সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক পরিবেশে এটি মন ও শরীরের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, এর সীমা এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি, যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।