ডেঙ্গু বা করোনার পরিচিত উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও অনেকে বর্তমানে এক অজানা জ্বরে ভুগছেন। গা, হাত, পায়ে ম্যাজমেজে ভাব, গাঁটে ব্যথা, চরম দুর্বলতা এবং অরুচি এই জ্বরের প্রধান লক্ষণ। এই রহস্যময় জ্বর প্রায় সাত দিনেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হচ্ছে, যা দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন উপায়ে সুস্থ হয়ে উঠতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় রয়েছে বেশ কিছু কার্যকরী উপায়।
চরক সংহিতা অনুসারে, বর্ষা ঋতুতে এই জাতীয় জ্বরের প্রধান কারণ হলো শরীরে বাত দোষের বৃদ্ধি। আয়ুর্বেদে এই জ্বর ‘সতত জ্বর’ এবং ‘অন্নেদুস্ক জ্বর’ নামেও পরিচিত।
প্রাথমিক পর্যায়ে করণীয়
জ্বর শুরুর প্রথম দিকে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে উপকার পাওয়া যায়:
১. সহজপাচ্য খাদ্য সেবন: এমন খাবার খান যা হজম হতে বেশি সময় লাগে না।
২. অধ্যশন বর্জনীয়: আগের খাবার হজম হওয়ার পরেই কেবল পরবর্তী আহার গ্রহণ করুন।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরকে সুস্থ করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
৪. নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ: যদি হজমে সমস্যা (মন্দাগ্নি) দেখা দেয়, তাহলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আয়ুর্বেদ মুষ্টিযোগ ও চিকিৎসা
আচার্য চরক বলেছেন, জ্বরের সময় অতিরিক্ত তৃষ্ণা থাকলে ষড়ঙ্গ পানীয় অত্যন্ত ফলপ্রসূ। এছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু আয়ুর্বেদিক ঔষধ যেমন গুলঞ্চ চূর্ণ, সুদর্শন চূর্ণ, সঞ্জীবনী বটি, আয়ুশ ক্বাথ, সুদর্শনঘন বটি এই জাতীয় জ্বরে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করে। তবে, এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা উচিত।
জ্বরের অরুচি নিবারণে
জ্বরের কারণে মুখে রুচি না থাকলে কিছু ঘরোয়া আয়ুর্বেদিক টোটকা বেশ উপকারী:
১. বাগভটের মতে, জ্বর অবস্থায় মুখে রুচি ফেরাতে লেবু বা ঘি ও সৈন্ধব লবণের মিশ্রণ মুখে রাখলে রুচি ফিরে আসে।
২. আমলকী, মিছরি ও কিশমিশ একসঙ্গে পেস্ট করে চাটনির মতো মুখে রাখলে অরুচি দূর হয়।
সকল ধরনের জ্বরে যা নিষেধ
আচার্য বাগভট বলেছেন, সব ধরনের জ্বরে ব্যায়াম, স্নান, গুরুদ্রব্য সেবন (গুরুপাক খাবার), এবং বিরুদ্ধ আহার (যেসব খাবার একসঙ্গে খেলে শরীরের ক্ষতি হয়) সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয়।
জ্বরের পথ্য
দোষ ভেদে জ্বরের পথ্য ভিন্ন হলেও মূলত লঘু ও সহজপাচ্য খাদ্যদ্রব্যই গ্রহণ করা দরকার। মুগ ডালের স্যুপ, পাতলা সুজি, বার্লি, পটল পাতার শাক, পটল, সজনে, করলা ইত্যাদি জ্বরের জন্য উপযুক্ত পথ্য। আচার্য চরকের মতে, জীর্ণ জ্বরে (পুরাতন জ্বর) দুগ্ধ পান সর্বশ্রেষ্ঠ পথ্য। জ্বর নাশক অন্নের মধ্যে যবাগু অর্থাৎ খিচুড়ি জাতীয় লঘু অন্ন হিতকর।
মনে রাখবেন: যেকোনো জ্বর তিনদিন অতিক্রম করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন।