জ্বর হলেই কি জ্বরঠোসা? কারণ ও প্রতিকারের আসল তথ্য জানুন!

শরীরে ভেতরে ভেতরে জ্বর আসলে কিংবা ঠাণ্ডা লাগলেই ঠোঁটের কোণে জ্বরঠোসা হয়। তবে এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের ভিন্ন মত রয়েছে। তাদের মতে, ঠোঁটের কোণায় একগুচ্ছ ছোট ছোট ফুসকুড়ি অথবা অন্য কোনো কারণে ঘা হলে তাকে জ্বরঠোসা বলা হয়।

চিকিৎসা পরিভাষায় একে ফিভার ব্লিস্টার (Fever blister) বলা হয়। ফুসকুড়ি ওঠার ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ঘা হয়। ঘা হলে ব্যথা হয় এবং অনেক সময় সেখান থেকে রসও গড়ায়। এই ব্লিস্টারে ব্যথা হলে তাকে কোল্ড সোরও বলা হয়ে থাকে। শীতকালে জ্বরঠোসা একটু বেশি দেখা যায়।

জ্বরঠোসার লক্ষণ:

ঠোঁটের কোণে, বর্ডারে বা বর্ডারের আশেপাশে গুচ্ছবদ্ধ ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া।
জ্বর অনুভব হওয়া।
ব্যথা ও অস্বস্তি লাগা।
বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া।
মাথাব্যথা।
খেতে অসুবিধা হওয়া।
ঠোঁটে জ্বালা করা।
ঠোঁট বারবার শুকনো হয়ে যাওয়া।
কেন হয় জ্বরঠোসা?

ফিভার ব্লিস্টারের প্রধান কারণ হলো এইচএসভি-১ ইনফেকশন (HSV-1 infection)। এই ভাইরাসের সংক্রমণের কারণেই জ্বর আসতে পারে! তবে হ্যাঁ, জ্বরের কারণেও ফিভার ব্লিস্টার হতে পারে, যদি সেই জ্বর অন্য কোনো ইনফেকশনের কারণে হয় যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এছাড়াও, ভিটামিন সি এবং ডি-এর অভাবেও কিন্তু জ্বরঠোসা হতে পারে।

কাদের বেশি হয়?

জ্বরঠোসা যে কোনো মানুষেরই হতে পারে। প্রায় ৮০% মানুষই এইচএসভি-১ ভাইরাসে আক্রান্ত থাকেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং সাধারণত দশ বছর বয়সে প্রথমবার প্রকাশ পায়। প্রথমবার হওয়া ফিভার ব্লিস্টার সেরে যাওয়ার পর এইচএসভি-১ স্নায়ুকোষে লুকিয়ে থাকে এবং জীবনে বার বার এর প্রকাশ ঘটতে পারে।

প্রতিকারের উপায়:

এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু সহজ উপায় জেনে নিন:

বরফ: যে জায়গায় ঘা হয়েছে সেই জায়গা নখ দিয়ে একদম খুঁটবেন না। বরং বরফ দিয়ে চেপে ধরলে ব্যথা কমবে এবং অন্য কোনো সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে। তবে বরফ সরাসরি নয়, একটি পাতলা কাপড়ে জড়িয়ে লাগাতে হবে। পাঁচ মিনিট চেপে ধরে রাখুন। এভাবে ১৫ মিনিট ধরে করুন। কোনো ব্যথাই সরাসরি বরফ লাগাবেন না।

লেমন এসেন্সিয়াল অয়েল: লেবুতে থাকা এসেন্সিয়াল অয়েল তুলো দিয়ে ক্ষতস্থানে চেপে চেপে লাগান। এরপর ওখানে কোনো অয়েন্টমেন্ট জাতীয় কিছু লাগিয়ে নিন।

রসুন খান: এরকম সমস্যা বেশি হলে রসুন বেশি করে খান। প্রতিদিন গরম ভাতে ভাজা রসুন ও কাঁচামরিচ খান। রসুনের আচারও খেতে পারেন অথবা কাঁচা রসুনও খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও, রসুনের কোয়া বেটে নিয়ে ক্ষতস্থানে লাগালেও ভালো ফল পাওয়া যায়। রসুনের অ্যান্টিভাইরাল উপাদান সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।

টি ট্রি অয়েল: মুখের যে কোনও সমস্যায় টি ট্রি অয়েল খুবই উপকারী। এই তেল মুখ ও ত্বক ভালো রাখে এবং যেকোনো ইনফেকশন থেকেও রক্ষা করে। মুখ ভালো করে ধুয়ে তুলায় করে টি ট্রি অয়েল লাগান। এভাবে ১৫ দিন ব্যবহার করলে অনেকটাই উপকার পাবেন। টি ট্রি অয়েলের অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

অ্যাপেল সিডার ভিনিগার: ভিটামিনের অভাবের কারণেও জ্বরঠোসা হতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। লেবু বা আমলার জুস পান করতে পারেন। প্রতিদিন অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেতে পারলে সেটিও খুব ভালো।

এই ঘরোয়া উপায়গুলো অবলম্বন করে জ্বরঠোসার অস্বস্তি এবং প্রকোপ কমানো সম্ভব। তবে সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy