গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনে এক বিশেষ অধ্যায়। এই সময়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। অনেক মহিলাই জানতে চান, গর্ভাবস্থায় কখন থেকে যোগব্যায়াম শুরু করা উচিত এবং কীভাবে এটি উপকারী হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম কখন শুরু করবেন?
সাধারণত, গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১২ সপ্তাহ পর) থেকে যোগব্যায়াম শুরু করা নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিককে শক্তি ও বিশ্রামের জন্য একটি ভালো সময় হিসেবে ধরা হয়। তবে যদি আপনি গর্ভাবস্থার আগে থেকেই নিয়মিত যোগব্যায়াম করে থাকেন, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম ত্রৈমাসিক থেকেই যোগব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়ামের উপকারিতা:
শক্তি ও নমনীয়তা বাড়ায়: যোগব্যায়াম গর্ভাবস্থায় শক্তি, নমনীয়তা এবং ভারসাম্য বাড়াতে সাহায্য করে।
মানসিক শান্তি: যোগব্যায়াম মনের শান্তি ও সংযম বজায় রাখে, যা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রসবের প্রস্তুতি: যোগব্যায়াম প্রসবের সময় শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে।
শিশুর সঙ্গে বন্ধন: যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মা ও শিশুর মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি হয়।
গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়ামের সময় মনে রাখার বিষয়:
১. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: গর্ভাবস্থায় যেকোনো নতুন ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. শরীরের সংকেত শুনুন: নিজের শরীরের ক্ষমতা বুঝে ব্যায়াম করুন এবং অতিরিক্ত চাপ দেবেন না।
৩. হাইড্রেটেড থাকুন: যোগব্যায়ামের সময় পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং অতিরিক্ত তাপ এড়িয়ে চলুন।
৪. সঠিক আসন বেছে নিন: প্রথম তিন মাস দাঁড়িয়ে বা বসে আসন করুন। পেট বা পিঠের উপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকার মতো ভঙ্গি এড়িয়ে চলুন।
৫. ধীরে ধীরে শুরু করুন: গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম ধীরে ধীরে শুরু করুন এবং শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী আসন করুন।
গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিছু যোগাসন:
বালাসন (Child’s Pose): এটি পিঠের ব্যথা কমাতে এবং মানসিক শান্তি দিতে সাহায্য করে।
মার্জারিয়াসন (Cat-Cow Pose): এটি মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়ায় এবং পিঠের ব্যথা কমায়।
বজ্রাসন (Thunderbolt Pose): এটি হজমশক্তি উন্নত করে এবং পিঠের ব্যথা কমায়।
সুখাসন (Easy Pose): এটি মনের শান্তি ও সংযম বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কোন আসন এড়িয়ে চলবেন?
পেটের উপর চাপ পড়ে এমন আসন (যেমন: ভুজঙ্গাসন)।
উল্টো হয়ে শুয়ে থাকার আসন (যেমন: শীর্ষাসন)।
অতিরিক্ত পেট টান দেওয়ার আসন।
যোগব্যায়ামের পাশাপাশি অন্যান্য টিপস:
সুষম খাদ্য: গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম: দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান এবং বিশ্রাম নিন।
মানসিক চাপ কমাতে: মেডিটেশন বা প্রাণায়াম করুন।
সতর্কতা:
যদি গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা থাকে (যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, রক্তপাত), তাহলে যোগব্যায়াম শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যোগব্যায়ামের সময় কোনো অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করলে তাড়াতাড়ি থামুন।
আরও পড়ুন:
গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য ৫টি সহজ টিপস
গর্ভাবস্থায় কী খাবেন, কী খাবেন না?
গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে অত্যন্ত উপকারী। সঠিক পদ্ধতিতে যোগব্যায়াম অনুশীলন করে আপনি গর্ভাবস্থাকে আরও সুখময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে পারেন।