গর্ভধারণ প্রতিটি নারীর জীবনে এক নতুন অধ্যায়। এই সময় নিজের শরীরের প্রতি যেমন বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, তেমনই খেয়াল রাখতে হয় গর্ভের সন্তানের সুস্থতার দিকেও। ঘুমের ধরণ এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবে শোয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। আপনি কীভাবে শোবেন, কোন দিকে ঘুরে শোবেন এবং আপনার শোয়ার ভঙ্গি কেমন হবে – এই তিনটি বিষয়ই আপনার অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থায় শোয়ার জন্য সবচেয়ে উপকারী ভঙ্গি হলো ‘এসওএস’ (স্লিপ অন সাইড)। এর অর্থ হলো, আপনি আপনার সুবিধামতো ডান বা বাঁ যেকোনো একদিকে ফিরে শুতে পারেন।
তবে চিকিৎসকরা বিশেষভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন বাঁ দিকে ফিরে শোয়ার জন্য। তাদের মতে, বাঁ দিকে ফিরে শুলে মায়ের শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। এর ফলে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল সুস্থ থাকে এবং গর্ভস্থ শিশু পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পায়। বেশ কিছু গর্ভবতী নারীর ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা বাঁ দিকে ফিরে শোন, তাদের শিশুরা তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয় এবং সুস্থ থাকে। যদিও অন্যান্য চিকিৎসকদের অভিমত, শিশুর সক্রিয়তা মূলত তার হৃদস্পন্দনের ওপর নির্ভর করে। যদি শিশুর হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে, তবে সে স্বাভাবিকভাবেই সক্রিয় থাকবে।
ঘুমের সময় আরামের জন্য পা এবং হাঁটু মুড়ে শুতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, দুই পায়ের মাঝে যেন একটি বালিশ থাকে। যদি আপনি পিঠে বা কোমরে ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই এসওএস পদ্ধতিতে শোয়ার অভ্যাস করুন। আরামের জন্য পেটের নিচে একটি পাতলা বালিশ রাখতে পারেন। রাতে যদি বুকে ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে শরীরের উপরের অংশ বালিশের ওপর সামান্য উঁচু করে রাখুন।
অন্যদিকে, গর্ভাবস্থায় কিছু বিশেষ ভঙ্গিতে শোয়া একেবারেই উচিত নয়। অনেক নারীই অভ্যাসগতভাবে পেটে ভর দিয়ে ঘুমাতে পছন্দ করেন। তবে গর্ভবতী অবস্থায় এই ভঙ্গিটি সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা উচিত। উপুড় হয়ে শুলে পেটের ওপর সরাসরি চাপ পড়ে, যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হতে পারে।
এছাড়াও, সোজা বা চিৎ হয়ে শোয়ার অভ্যাসও গর্ভাবস্থায় তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষণা অনুযায়ী, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে কিছুদিনের জন্য চিৎ হয়ে শোয়া গেলেও, শেষের দিকে অর্থাৎ ডেলিভারির আগ পর্যন্ত এই অভ্যাস ক্ষতিকর হতে পারে। চিৎ হয়ে শুলে জরায়ু প্রধান রক্তনালীগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে মায়ের শরীরে রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং গর্ভের শিশু পর্যাপ্ত অক্সিজেন নাও পেতে পারে।
তাই, প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের উচিত ঘুমের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং ‘এসওএস’ অর্থাৎ একদিকে কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস করা। আপনার সামান্য সচেতনতা আপনার এবং আপনার সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।