কিডনি, নীরব ঘাতক! এই লক্ষণগুলি দেখলেই সতর্ক হন, প্রাণ বাঁচাতে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান!

মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি বা বৃক্ক, যা আমাদের শরীরের ছাকনির মতো কাজ করে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। কিন্তু এই অতীব জরুরি অঙ্গটির সমস্যাকে প্রায়শই ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। কারণ, কিডনির অসুখের উপসর্গগুলো এতটাই মৃদু হয় যে, অনেক সময় রোগ গভীর না হলে তা বুঝে ওঠা যায় না, এবং এর ফলস্বরূপ যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেককেই হারাতে হচ্ছে প্রাণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতাগুলোর মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের পরই অবস্থান করছে কিডনি ড্যামেজ বা কিডনি ক্যান্সার। কেবলমাত্র আমেরিকাতেই প্রায় ২৬ মিলিয়ন মানুষ কিডনি সমস্যায় ভুগছেন, যা এর ভয়াবহতা তুলে ধরে।

তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে, যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কিডনিতে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না। এই লক্ষণগুলো অবহেলা করলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক।

কিডনি সমস্যার ৫টি গুরুতর লক্ষণ:
১. সব সময় ক্লান্ত লাগা এবং কর্মোদ্যম হারানো:
কাজের প্রতি অনীহা এবং ক্রমাগত ক্লান্তি বোধ কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান লক্ষণ। কিডনির মূল কাজ হলো রক্তকে পরিশুদ্ধ করা। কাজেই কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় উপাদান বাড়তে থাকে। এর ফলে শরীর সর্বদা ক্লান্ত লাগে। এমনকি, রক্তাল্পতার সমস্যাও দেখা দিতে পারে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ক্লান্তির অন্যতম কারণ।

২. পা ফুলে যাওয়া:
কিডনির সমস্যায় শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যার ফলে পা, গোড়ালি এবং হাত ফুলে যেতে পারে। অনেক সময় খনিজ লবণের ভারসাম্যের অভাবে শরীরের পেশিতে টান লাগার সমস্যা তৈরি হয়। মূলত ক্যালশিয়াম ও ফসফরাসের সমস্যায় এমন ঘটনা ঘটে, যা কিডনি বিকল হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।

৩. অনিদ্রা:
কিডনি ঠিকঠাক কাজ না করলে মূত্রের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থগুলো দেহের বাইরে বেরোতে পারে না। এই বর্জ্য পদার্থগুলি রক্তে জমা হয়ে অনিদ্রার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের ঘুম না আসার সমস্যা সুস্থ মানুষদের তুলনায় অনেক বেশি।

৪. ত্বকের সমস্যা:
মানবদেহে প্রয়োজনীয় লবণ ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখাও কিডনির অন্যতম প্রধান কাজ। ত্বকের সজীবতা বজায় রাখতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় এই উপাদানগুলোর বড় ভূমিকা থাকে। ফলে শুষ্ক খসখসে ত্বক, ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি বা ঘা এবং হাড়ের সমস্যা কিডনির অসুখের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে।

৫. মূত্রের সমস্যা:
মূত্রত্যাগ সংক্রান্ত যে কোনো পরিবর্তন কিডনি অসুস্থতার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে।
* ঘন ঘন মূত্রত্যাগ: বিশেষত রাতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বার মূত্রত্যাগ করতে হলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
* মূত্রের সঙ্গে রক্ত: মূত্রের সঙ্গে রক্ত বার হওয়া একটি গুরুতর লক্ষণ, যা অবিলম্বে চিকিৎসকের মনোযোগ দাবি করে।
* মূত্রে অতিরিক্ত ফেনা: মূত্রে অতিরিক্ত ফেনা তৈরি হওয়া অ্যালবুমিন নামক প্রোটিনের উপস্থিতি নির্দেশ করে, যা কিডনির সমস্যার একটি বড় চিহ্ন।

যদি উপরের উল্লিখিত কোনো লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে তা অবহেলা না করে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। কিডনির স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন, কারণ এটি আপনার সামগ্রিক সুস্থতার চাবিকাঠি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy