ওজন কমানোর চেষ্টায় অনেকেই সালাদের অপরিহার্য অংশ হিসেবে শসা গ্রহণ করেন। শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণেই নয়, শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও শসা একটি অত্যন্ত কার্যকর সবজি। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খেলে শরীরে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ত্বকের চুলকানি থেকে শুরু করে সাইনোসাইটিস পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে অতিরিক্ত শসা খাওয়ার কারণে। আপাতদৃষ্টিতে উপকারী মনে হলেও, কিছু ক্ষেত্রে শসা শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত শসা খেলে শরীরে কী কী সমস্যা হতে পারে:
১. অত্যাধিক তরল ক্ষতিকর:
শসার বীজে কিউকারবিটিন নামক একটি উপাদান থাকে। এই উপাদানটি মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ফলে অতিরিক্ত শসা খেলে শরীর থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে যেতে পারে। এর ফলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ব্যাহত হয় এবং ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে।
২. বিষাক্ত উপাদান বিদ্যমান:
শসার মধ্যে কিউকারবিটাসিন ও টেট্রাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনয়েডের মতো বিষাক্ত উপাদানও রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এই উপাদানগুলোই মূলত শাকসবজিতে তিক্ত স্বাদ তৈরি করে। এমনকি গবেষণায় এমনও উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরিমিত মাত্রার চেয়ে বেশি শসা গ্রহণ জীবনহানিকরও হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ভিটামিন সি-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ফ্লু, স্কার্ভির মতো বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও বটে। তবে যখন খুব বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করা হয়, তখন এর অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ বৈশিষ্ট্য প্রো-অক্সিডেন্টের মতো কাজ করতে শুরু করে। ফলে শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে, যা ক্যানসার, ব্রণ ও অকাল বার্ধক্যের কারণ হতে পারে।
৪. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি:
শরীরে উচ্চ মাত্রায় পটাসিয়ামের উপস্থিতি হাইপারক্যালেমিয়া নামক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এর প্রাথমিক লক্ষণ হলো পেটে ফোলাভাব, ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। সময়ের সাথে সাথে এই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে এবং কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, যা রেনাল সিস্টেমের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
৫. ওরাল ও স্কিন অ্যালার্জি:
আমেরিকান একাডেমি অব অ্যালার্জি অ্যাজমা অ্যান্ড ইমিউনোলজির একটি গবেষণা অনুসারে, সবুজ চামড়ার কাঁচা সবজি খাওয়ার পর অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। যদিও রান্না করা বা গ্রিল করা শসার ক্ষেত্রে এই সমস্যা সাধারণত দেখা যায় না।
৬. হৃদযন্ত্রে চাপ সৃষ্টি:
শসায় ৯০ শতাংশেরও বেশি জল থাকে। অতিরিক্ত জল গ্রহণের ফলে রক্তের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রক্তনালী ও হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। জলের অত্যধিক উপস্থিতি রক্তের ইলেক্ট্রোলাইট স্তরে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে, যা কোষের ক্ষয়ের কারণ। এর ফলে ঘন ঘন মাথাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও হতে পারে।
৭. পেট ফাঁপা:
শসায় কিউকারবিটাসিন নামক যে উপাদানটি থাকে, তা কারও কারও ক্ষেত্রে বদহজমের কারণ হতে পারে। এর ফলে পেট ফুলে যাওয়া, পেট ফাঁপাসহ ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। যাদের পেঁয়াজ, বাঁধাকপি অথবা ব্রকোলি খেলে পেটে অস্বস্তি হয়, তাদের শসা খাওয়া সীমিত করা উচিত।
৮. সাইনোসাইটিসের সমস্যা বৃদ্ধি:
যাদের সাইনোসাইটিস বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের কোনো সমস্যা রয়েছে, তাদের বেশি পরিমাণে শসা খাওয়া উচিত নয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে, শসার শীতল প্রভাব এ ধরনের শারীরিক অবস্থাকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
৯. গর্ভাবস্থায় সতর্কতা:
যদিও গর্ভাবস্থায় শসাকে সাধারণত নিরাপদ বলে মনে করা হয়, তবে অনেক গর্ভবতী নারী শসা খেলে পেটের অস্বস্তিতে ভোগেন। তাই গর্ভবতী মহিলাদের শসা খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
পরিশেষে বলা যায়, শসা নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যকর সবজি, তবে এর অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই শসা খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।