আলু বিশ্বব্যাপী অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। প্রতিদিনের তরকারি রান্নায়, রাস্তার পাশে চটপটি বা ফুসকা তৈরিতে, বাড়িতে তৈরি কাচ্চি বিরিয়ানি- কোথায় নেই আলু! এই সবজি আমাদের রান্নার একটি অপরিহার্য অংশ। এটি যেকোনো উপাদানের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারে। এই বিশেষ কারণে আলু অনেকেরই পছন্দের সবজি।
ডিকে পাবলিশিংয়ের ‘হিলিং ফুডস’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে আলু ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফাইবার, বি ভিটামিন কপার, ট্রিপটোফান, ম্যাঙ্গানিজ এবং লুটিনের একটি চমৎকার উৎস। এটি শরীরের প্রদাহ রোধ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির জন্য বিস্ময়কর কাজ করে।
প্রদাহ কমায়
আলু প্রদাহ বিরোধী। এটি ডিউডেনাম আলসারকে প্রশমিত করে এবং পেটের অম্লতা কমাতে পারে। এই সবজি আর্থ্রাইটিসের কারণে সৃষ্ট প্রদাহকেও উপশম করতে পারে। আপনার খাবারের তালিকায় আলু রাখুন। তবে মনে রাখবেন, যেকোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
হ্যাঁ, আলু স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনি ফ্যাটযুক্ত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস এবং সমস্ত প্রক্রিয়াজাত জাঙ্কফুড খেতে শুরু করবেন। এ ধরনের খাবার আপনার হৃদযন্ত্রে প্রভাব ফেলবে। তাই আলু খেতে হবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে। যদি স্বাস্থ্যকরভাবে ভাবে প্রস্তুত করা হলে আলু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। আলুতে প্রায় ১০০ ক্যালোরি আছে, কিন্তু এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং শরীর আর্দ্র রাখার জন্য খুব ভালো। আলু উচ্চ সোডিয়াম স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে। এতে আছে ক্লোরোজেনিক এসিড এবং অ্যান্থোসায়ানিন রাসায়নিক যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের উন্নতি
আলুতে উপস্থিত কো -এনজাইম আলফা লিপোইক অ্যাসিড মস্তিষ্কের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অ্যাসিড আলঝাইমারের রোগীদের জন্যও বিশেষ উপকারী। আলুতে উপস্থিত বেশ কয়েকটি ভিটামিন এবং খনিজ যেমন- দস্তা, ফসফরাস এবং বি কমপ্লেক্স মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। ভিটামিন বি ৬ স্নায়বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
হজমে সাহায্য করে
আলুতে থাকে পর্যাপ্ত ফাইবার। এই ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। আলু ডায়রিয়া থেকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। আলুতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। তাই ডায়রিয়ার কারণে শরীরে পটাশিয়ামের যে ঘাটতি তৈরি হয় তা পূরণে সাহায্য করে আলু।
উদ্বেগ কমায়
আলুর উচ্চ কার্ব উপাদান ট্রিপটোফ্যানের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরে সেরোটোনিন উৎপাদনকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই সেরোটোনিনকে সুখের হরমোনও বলা হয়। সেরোটোনিনের এই স্পাইক মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে এবং উদ্বেগ কমায়।
হাড়ের জন্য ভালো
আলু ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ, আলু হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। আলুতে উপস্থিত আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিংক সবই হাড়ের গঠন এবং রক্ষণাবেক্ষণে অবদান রাখে। দস্তা এবং আয়রন কোলাজেন উৎপাদন ও পরিপক্কতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আলুতে এই সমস্ত উপাদান রয়েছে।
সুস্থ ত্বক পেতে আলুর ব্যবহার
আলু আপনার ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। আলুর পেস্ট এবং আধা চা চামচ দই দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি মুখে লাগান এবং ২০-২৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে এটি নিয়মিত ব্যবহার করুন।