আঙুল ফোটানোর রহস্য: আরাম নাকি ক্ষতির কারণ?

আমরা অনেকেই আছি মাঝেমধ্যেই পটাং পটাং করে আঙুল ফাটিয়ে থাকি। আঙুল ফোটালে এক ধরনের জোরালো মট মট শব্দ হয়। সাধারণত মনে করা হয়, আঙুল মোচড়ানোর সময় হাড়ে হাড়ে ঘষা লেগে হয়তো এই শব্দ হয়। তবে ব্যাপারটা আসলে সে রকম নয়। আঙুল ফোটানোর সময় মোটেও হাড়ে হাড়ে ঘষা লাগে না।

কেন হয় এই মট মট শব্দ?
আমরা যখন আঙুল ফোটাই, আঙুলগুলোকে আমরা সাধারণত এতটা মোচড় দিয়ে থাকি, যতটা স্বাভাবিকভাবে আঙুলের পক্ষে মোচড়ানো সম্ভব নয়। আমাদের অস্থিসন্ধিগুলির চারপাশে এক ধরনের তরল থাকে, যেটাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় সাইনোভিয়াল ফ্লুইড (Synovial Fluid)। যখন আমরা অস্থিসন্ধিগুলিকে তাদের স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসি, এই তরলে এক ধরনের শূন্যতা বা ফাঁপা অংশের সৃষ্টি হয়। শূন্যস্থানে একটি বুদবুদের সৃষ্টি হয় যা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফেটে যায়। এই বুদবুদের ফাটার শব্দটাই আমাদের কানে পৌঁছায়। এটাই হলো আঙুল ফোটানোর শব্দের আসল কারণ।

আঙুল ফোটানো কি উপকারী?
সাধারণত আঙুল বা পিঠের হাড় ফোটালে আমাদের সাময়িকভাবে খানিকটা আরাম মেলে। কারণ ওই বিশেষ ভঙ্গি বা কসরতের ফলে শরীরের ওই অঞ্চলের জড়তা কাটিয়ে ওঠা যায়। সেই দিক থেকে আঙুল ফাটানো খারাপ নয়। এছাড়াও, প্রচলিত ভুল ধারণা সত্ত্বেও, আঙুল ফোটানোর সঙ্গে বয়সকালে বাতের ব্যথার কোনো সম্পর্ক নেই, এমনটাই গবেষণায় উঠে এসেছে।

কখন হতে পারে সমস্যা?
তবে যারা খুব বেশি আঙুল ফোটান বা আঙুল ফোটানোটা যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তাদের একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এই অভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ক্রমশ তাদের আঙুলের অস্থিসন্ধিগুলি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

কাজেই, কাজের ফাঁকে হাত বা পিঠকে আরাম দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে আঙুল ফোটানো যেতেই পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন বদভ্যাসে পরিণত না হয় এবং অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করা হয়। আপনার যদি আঙুলের গাঁটে বা জয়েন্টে ক্রমাগত ব্যথা হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy