অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে আমরা প্রায়শই অ্যান্টিবায়োটিকের দ্বারস্থ হই। নানা ব্যথা-বেদনা ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা অনস্বীকার্য। কিন্তু সমস্যা হলো, এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে। কখনো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা হয়, আবার কখনো নিজেই ‘চিকিৎসক’ সেজে মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলি। এই প্রবণতা সংক্রমণজনিত রোগ সাময়িকভাবে কমালেও, দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ওপর এক খারাপ প্রভাব ফেলে।
ভালো ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করার কারণে শরীরে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার দৌরাত্ম্য বাড়ে, যা পরবর্তীতে অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাশুল গুণতে বাধ্য করে। তাই অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা, প্রকার এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে কাজ করে?
বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যপদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন:
কুইনোলোনস (যেমন: লেভোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন): নিউমোনিয়ার মতো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
পেনিসিলিন: এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক কোষের গায়ে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে সরাসরি ধ্বংস করে।
এরিথ্রোমাইসিন (ম্যাক্রোলাইড অ্যান্টিবায়োটিক): এরা কোষের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়ার রাইবোসোমকে আক্রমণ করে এবং ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
অর্থাৎ, প্রতিটি অ্যান্টিবায়োটিক নির্দিষ্ট উপায়ে কাজ করে শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মেরে আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার:
প্রায় সব ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণেই সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, তবে তা অবশ্যই পর্যাপ্ত ও সঠিক পরিমাণে।
ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক: একসঙ্গে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ছড়ালে এটি ব্যবহৃত হয়।
লিমিটেড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক: কেবলমাত্র নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে ব্যবহৃত হয়। আপনার কোন রোগে কী ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন, তা একমাত্র চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন।
সাধারণত যে রোগগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে:
ত্বকের সংক্রমণ
নিউমোনিয়া
কিডনি বা অন্ত্রের সংক্রমণ
সাইনাস সংক্রমণ
কানের সংক্রমণ
মেনিনজাইটিস
দাঁতের সংক্রমণ
অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: অতিরিক্ত ব্যবহারের বিপদ
কিছু ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ক্ষতিকারক জীবাণু নষ্ট করার পাশাপাশি আপনার শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও নষ্ট করে দেয়। এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়, যা অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। সুতরাং, অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে আপনার শরীরে বিপরীত প্রভাব পড়তে পারে, অর্থাৎ ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে গিয়ে সংক্রমণ আরও গুরুতর হয়ে যেতে পারে।
অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
ডায়রিয়াল সংক্রমণ
বমি বমি ভাব
পেটে ব্যথা
পেশিতে টান বা ব্যথা
পটির সঙ্গে রক্তপাত (কিছু ক্ষেত্রে)
অ্যান্টিবায়োটিক একটি শক্তিশালী ওষুধ, যা জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। কিন্তু এর যথেচ্ছ ব্যবহার আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করুন এবং নিজের শরীরের প্রতি সচেতন হন।