কলকাতা। ৭-৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে ঘুমানোর পরেও সকালে ক্লান্তি, অলসতা এবং খিটখিটে ভাব একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত সময় ঘুমানোর পরেও যদি আপনি সতেজ বোধ না করেন, তবে বুঝতে হবে আপনার ঘুমের মান (Sleep Quality) ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে এমন কিছু কারণ, যা আপনার অজান্তেই ঘুমের শত্রু হয়ে উঠেছে।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য হলেও, অনেকে ১০-১২ ঘণ্টা ঘুমিয়েও ক্লান্ত থাকেন। এর কারণ হল, গভীর বা ‘ভাঙা ভাঙা’ ঘুম, যার ফলে শরীর ও মন পুরোপুরি রিচার্জ হতে পারে না।
আপনার ঘুমের মান নষ্ট করছে যে ৮টি লুকানো কারণ:
১. রাতে স্ক্রিন দেখার অভ্যাস: মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি থেকে নির্গত নীল আলো ঘুমের সহায়ক হরমোন মেলাটোনিনকে দমন করে। এটি মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, যার ফলে আপনি গভীর ঘুমে যেতে পারেন না।
২. রাতে ক্যাফেইন বা মিষ্টি জাতীয় খাবার: সন্ধ্যার পর চা, কফি, চকলেট বা মিষ্টি খাওয়া স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে শরীর শিথিল হতে পারে না এবং ঘুমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৩. অনিয়মিত ঘুমের রুটিন: প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে (Circadian Rhythm) ব্যাহত করে। এটি আপনার ঘুমের চক্রকে ভেঙে দেয় এবং ক্লান্তি বাড়িয়ে তোলে।
৪. ঘন ঘন ঘুমের ব্যাঘাত: যদি আপনার ঘুম বারবার ভেঙে যায়, তবে গভীর ঘুমের প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থাকে। ফলে শরীর পুরোপুরি রিচার্জ হতে পারে না।
৫. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ: মনের মধ্যে থাকা উদ্বেগ এবং ভয় ঘুমের গভীরতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও, সেই ঘুম কার্যকরি বা উপকারী হয় না।
৬. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: থাইরয়েড বা অন্যান্য হরমোনজনিত সমস্যা ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে। এর ফলে পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও ক্লান্তি থেকে যায়।
৭. অসুস্থ ঘরের পরিবেশ: অত্যধিক গরম বা ঠান্ডা, কোলাহলপূর্ণ বা বায়ুচলাচলের অভাবযুক্ত ঘর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ঘুমের জন্য শান্ত, শীতল এবং আরামদায়ক পরিবেশ জরুরি।
৮. স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা: এই রোগে ঘুমের সময় বারবার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। এর ফলস্বরূপ, সকালে আপনি কখনোই সতেজ বোধ করতে পারবেন না।
ঘুম কেবল শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেই নয়, মনকেও চাঙ্গা করে। তাই যদি নিয়মিত ক্লান্ত বোধ করেন, তবে এই কারণগুলি শনাক্ত করা এবং তা সমাধানের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ঘুমের মান অবহেলা করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ক্ষতিকর হতে পারে।