হার্টের সমস্যা আজকাল কমবয়সীদের মধ্যেও বাড়ছে, যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। করোনারি আর্টারির কারণে প্রতি বছর প্রায় ৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। হার্টের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রায়শই ‘হার্ট অ্যাটাক’ এবং ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ শব্দ দুটি গুলিয়ে ফেলা হয়, যদিও এদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এই দুটি অবস্থা কীভাবে ভিন্ন এবং কেন ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ ঘটে, তা জেনে নেওয়া যাক।
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্ট অ্যাটাক ঘটে যখন হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে ব্লক বা চর্বি জমে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশি পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, এবং অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে পেশির ক্ষতি হতে শুরু করে। যদি এই অবস্থা দীর্ঘক্ষণ থাকে এবং চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে হার্ট অ্যাটাক হয় এবং মানুষ মারা যেতে পারে। এটি মূলত হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থার একটি সমস্যা।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?
অন্যদিকে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল এমন একটি জরুরি অবস্থা যখন মানুষের হৃদপিণ্ড হঠাৎ করে রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দেয় এবং এর সঙ্গে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসও বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে শরীর ও মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে এটি দ্রুত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সম্পর্ক:
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হার্ট অ্যাটাকের কারণে ঘটে থাকে। কারণ, যখন একজন ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক হয়, তখন হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ছন্দে পরিবর্তন আসে, যা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (Arrhythmia) সৃষ্টি করতে পারে। এই অ্যারিথমিয়াই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মূল কারণ হতে পারে।
‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ কেন হয়?
হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মূল কারণ হলো হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক ছন্দ বা বিট, যাকে অ্যারিথমিয়া বলা হয়। এর অর্থ হলো হার্টের বৈদ্যুতিক সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করছে না। হৃৎপিণ্ডের এই বৈদ্যুতিক সিস্টেম আপনার হৃদস্পন্দন ও তাল নিয়ন্ত্রণ করে। এতে কোনো সমস্যা হলেই হৃৎপিণ্ড খুব দ্রুত, খুব ধীরে বা অনিয়মিতভাবে স্পন্দিত হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যারিথমিয়া ক্ষতিকারক হয় না, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘটাতে পারে, যেখানে রক্ত পাম্প করার পরিবর্তে হার্ট অকেজোভাবে কাঁপতে থাকে (ভেন্ট্রিকল ফাইব্রিলেশন)।
এই অবস্থায়, হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং জ্ঞান সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। শরীরের সমস্ত অংশে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে দ্রুত সিপিআর (Cardiopulmonary Resuscitation) এবং জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সিপিআর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকির কারণ:
হৃৎপিণ্ডে আগে থেকে সমস্যা থাকলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন:
করোনারি আর্টারি ডিজিজ: হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে ব্লক।
পূর্ববর্তী হার্ট অ্যাটাক: হার্ট অ্যাটাকের ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশির ক্ষতি হলে অ্যারিথমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
সাধারণের চেয়ে বড় হার্ট (কার্ডিওমায়োপ্যাথি): হৃৎপিণ্ডের পেশি অস্বাভাবিকভাবে বড় হলে বা পুরু হলে।
হার্টের ভালভের সমস্যা: ভালভের কার্যকারিতা ব্যাহত হলে।
জন্মগত হার্টের সমস্যা: জন্ম থেকেই হৃৎপিণ্ডের গঠনে ত্রুটি থাকলে।
লক্ষণসমূহ:
‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’-এর প্রধান এবং সবচেয়ে উদ্বেগজনক লক্ষণগুলো হলো:
আকস্মিক জ্ঞান হারানো
হৃদস্পন্দন না থাকা
শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
তবে, অনেক সময় হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আগে অন্যান্য সূক্ষ্ম লক্ষণ ও উপসর্গও দেখা দিতে পারে, যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়:
বুকে অস্বস্তি
নিশ্বাসের দুর্বলতা বা শ্বাসকষ্ট
অত্যধিক দুর্বলতা
খুব দ্রুত হৃদস্পন্দন বা বুক ধড়ফড় করা
সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, ‘হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ প্রায়শই কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই দেখা দেয়। তাই হার্টের যেকোনো অস্বাভাবিকতা বা বুকের অস্বস্তি অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক। সঠিক সময়ে সচেতনতা এবং চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে।