হার্ট অ্যাটাক: নীরব ঘাতক থেকে বাঁচতে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন?

বিশ্বে প্রতি বছর হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রায় ২ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগের কারণে, যা ওই বছরের বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর প্রায় ৩২ শতাংশ। করোনা পরবর্তী সময়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে হার্ট অ্যাটাককে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

কেন হয় হার্ট অ্যাটাক?
হার্ট অ্যাটাক বর্তমানে একটি পরিচিত সমস্যা, যা শুধু বয়স্কদের নয়, অল্প বয়সীদের ক্ষেত্রেও ঘটছে। হার্ট অ্যাটাকে হৃৎপিণ্ডের পেশিতে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয় না, অনেক সময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। রক্তনালীতে ব্লকেজ হলে বুকে চাপ এবং খিঁচুনি দেখা যায়, যা করোনারি আর্টারি ডিজিজের অন্যতম প্রধান কারণ। পারিবারিক ইতিহাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। আমাদের পরিচিত কিছু খাবারও এই সমস্যাকে ডেকে আনতে পারে। জেনে নিন, হার্ট অ্যাটাক এড়াতে কোন খাবারগুলোতে নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি:

যেসব খাবারে রাশ টানবেন
চিনি ও লবণ: খাবারের স্বাদ বাড়াতে লবণ ও চিনি ব্যবহার করা হলেও, বেশিরভাগ মানুষই এই দুই খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে থাকেন। এর ফলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয় এবং হার্টের সমস্যা বাড়তে পারে। সব ধরনের ফ্রোজেন ফুড ও ফাস্ট ফুডে অতিরিক্ত লবণ ও চিনি থাকে, তাই এ ধরনের খাবার বাদ দিতে হবে। এর বদলে শাক-সবজি, ফল, দানা শস্য, লো ফ্যাট খাবার, প্রোটিন, দুধ ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

রেড মিট: খেতে সুস্বাদু হলেও রেড মিট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রেড মিট খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে, কারণ এ ধরনের মাংসে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এর ফলে রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমার ভয় বেড়ে যায়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই হার্টের সমস্যা থাকলে খাবারের তালিকা থেকে রেড মিট বাদ দিন।

কোমল পানীয়: ভারী খাবার খাওয়ার পর কোমল পানীয় পানের অভ্যাস অনেকেরই থাকে। এ ধরনের পানীয়তে প্রচুর চিনি থাকে। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করলে তা ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থুলতার কারণ হতে পারে। তাই কোমল পানীয় পান করা বাদ দিয়ে এর বদলে লেবুজল, সাধারণ জল, ডাবের জল ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

বিস্কুট ও চানাচুর: প্রতিদিন খাবার হিসেবে যেসব বিস্কুট, চানাচুর, ঝুরিভাজা, চিপস বা এ ধরনের খাবার খান, তাতে প্রচুর ক্যালোরি, লবণ ও চিনি থাকে। এগুলো ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এই খাবারগুলো তৈরির প্রধান উপকরণ হলো ময়দা, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ধরনের খাবারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি।

পাস্তা, ভাত, লুচি: পাস্তা, ভাত, লুচি জাতীয় খাবারে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট থাকে। অতিরিক্ত ভাত খেলে তা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে, আর ওজন বাড়লে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণ নির্ধারণ করে নিন।

সুস্থ হার্টের জন্য একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন অত্যন্ত জরুরি। আপনি কি আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কোনো পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন?

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy