ঘরে বা বাইরে কাজ করতে গিয়ে কিংবা রান্না করার সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হাত-পা কেটে যাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। ছোটখাটো এই কাটাছেঁড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী। তবে এর সঠিক যত্ন না নিলে ক্ষত শুকাতে অনেক সময় লাগে এবং সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে। ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে বা ব্যান্ডেজ না করলে ধুলাবালি লেগে ব্যথা আরও বাড়তে পারে।
তাই শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ করা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করাই হলো প্রাথমিক চিকিৎসার মূল লক্ষ্য। কেটে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে যা করবেন:
রক্তপাত বন্ধ করুন: একটি পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে কাটা স্থানটি চেপে ধরুন। কাপড় বা গজ না পেলে হাতের তালু অথবা দুই আঙুল ব্যবহার করে চিমটির মতো ধরে রাখুন। একটানা ২০-৩০ মিনিট চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রক্ত জমাট বাঁধবে এবং রক্তপাত বন্ধ হবে।
ক্ষত পরিষ্কার করুন: রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষত স্থানটি পরিষ্কার জলে ভালো করে ধুয়ে নিন। জীবাণুমুক্ত করতে আয়োডিন বা আয়োডিনযুক্ত অ্যান্টিসেপটিক অথবা ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণ সাবানও ব্যবহার করা যেতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগান: কাটা স্থান পরিষ্কার করার পর সেখানে পাতলা স্তরে অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগিয়ে দিন। মিউপিরোসিন, নিওমাইসিন বা এই জাতীয় মলম সবসময় বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে রাখা উচিত।
বিকল্প চিকিৎসা (প্রয়োজনে): হাতের কাছে অ্যান্টিবায়োটিক মলম না থাকলে হলুদের গুঁড়া অথবা লবণ জল ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যান্ডেজ করুন: সবশেষে একটি পাতলা গজ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে সম্পূর্ণ স্থানটি হালকাভাবে আটকে দিন।
নিয়মিত ব্যান্ডেজ পরিবর্তন: ব্যবহৃত ব্যান্ডেজটি সাধারণ গজ ব্যান্ডেজ হোক বা স্টিকারযুক্ত, প্রতিদিন অন্তত একবার তা পরিবর্তন করতে হবে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন:
যদি কাটা জায়গা ফুলে যায় বা লাল দেখায়, ব্যথা বাড়তে থাকে, ব্যান্ডেজ ভিজে যায় অথবা জ্বর আসে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এগুলো কাটা স্থানে সংক্রমণের লক্ষণ।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় মনে রাখবেন:
কেটে গেলে রক্তপাত হওয়া স্বাভাবিক, তবে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলে বুঝবেন রক্তনালি কেটে গেছে এবং এটি বন্ধ করা কঠিন হতে পারে।
যকৃতের রোগ, হিমোফিলিয়া, ডেঙ্গু অথবা দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসপিরিন সেবন করছেন এমন রোগীদের রক্তপাত সহজে বন্ধ নাও হতে পারে।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নাড়ির স্পন্দন কমে যেতে পারে, রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসতে পারে। এটি রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার লক্ষণ।
কোনো রোগী কেটে-ছিঁড়ে যাওয়ার পর হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়লে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
আধা ঘণ্টা চেপে রাখার পরও যদি রক্তপাত বন্ধ না হয়, তাহলে ওই স্থানে সেলাই লাগতে পারে।
লোহা বা অন্য কোনো বস্তু ঢুকে রক্তপাত হলে এবং ক্ষতস্থানে বস্তুটি আটকে থাকলে ক্ষতস্থানের দুই পাশ চেপে ধরুন। কোনোভাবেই ক্ষতস্থানের ওপর চাপ দেবেন না এবং বস্তুটি বের করার চেষ্টা করবেন না। ক্ষতস্থান ও বস্তুটির ওপর আলতো করে গজ বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান।
রক্তপাত বন্ধ না হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছোটখাটো কাটাছেঁড়াকে অবহেলা করবেন না। সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি সংক্রমণ এড়াতে এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।