‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে’ – মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই অমর উক্তিটি জীবনের এক অমোঘ সত্য। তবুও মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা চিরন্তন। বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু কিছুটা কম হলেও, মৃত্যুভীতি আমাদের সকলের মধ্যেই বিদ্যমান। বিশেষত অবসরের বয়স ৬০ থেকে কমে ৫৮ হওয়ার পর থেকেই যেন এই চিন্তা আমাদের আরও বেশি গ্রাস করে, যা অনেক ক্ষেত্রে হতাশার জন্ম দেয়।
তবে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা আশার আলো দেখাচ্ছে। এই গবেষণা অনুসারে, সঠিক পথে জীবনযাপন করলে আমরা কম করে হলেও ১৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারি। এমনকি সেই আয়ুষ্কাল ১৫০ বছর পর্যন্তও টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
‘কেই বা ‘মরিতে চায় এই সুন্দর ভূবনে’?’ – তাই সকলের জন্যই এই সুখবরটি দিয়েছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা। এই গবেষণাপত্রটি ‘রয়্যাল সোসাইটি ওপ্ন সায়েন্স জার্নাল’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন যে মানুষের আয়ুর কোনো নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমা নেই, আক্ষরিক অর্থেই। এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন লসনের সুইস ফেডেরাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ইপিএফএল)-এর বিজ্ঞানীরা।
গবেষকদের মতে, পরিবেশ দূষণের কারণে আগের চেয়ে মানবজীবনের ঝুঁকি কিছুটা বাড়লেও, মানুষের গড় আয়ুতে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি। যদি আমরা চল্লিশের কোঠায় পৌঁছানোর পর থেকেই মোটামুটি সঠিকভাবে জীবন যাপন করতে পারি, তবে দীর্ঘ জীবন পাওয়া সম্ভব।
গবেষকরা ১৩টি দেশের ১০৫ এবং ১১০ বছরেরও বেশি বয়সের এক হাজারেরও বেশি পুরুষ ও মহিলাসহ বিভিন্ন বয়সীদের গত ৬০ বছরের আয়ুষ্কাল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
গবেষণাপত্রে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমটি হলো মানব ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী ফরাসি মহিলা জেন কামেন্তঁ, যিনি ১৯৯৭ সালে ১২২ বছর বয়সে মারা যান। দ্বিতীয় ঘটনাটি জাপানের কানে তানাকা, যিনি বর্তমানে ১১৮ বছর বয়সেও সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপন করছেন।
এই গবেষণা নিঃসন্দেহে প্রবীণ এবং মধ্যবয়সী মানুষদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করবে এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণে উৎসাহিত করবে।