ভারতের স্বাস্থ্য পরিসংখ্যানে স্তন ক্যান্সারের ক্রমবর্ধমান হার উদ্বেগজনক। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের শহরাঞ্চলে এটি সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এমনকি গ্রামীণ এলাকাতেও এর প্রকোপ কম নয়। প্রতি ৪ মিনিটে একজন ভারতীয় নারী স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে যান, এবং প্রতি ১৩ মিনিটে একজন নারীর এই রোগে মৃত্যু হয়। এই ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যানটি স্তন ক্যান্সারের বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিরোধ ও দ্রুত নির্ণয়ের মাধ্যমেই এই রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ মেনে চললে এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করা যায়।
সচেতনতা ও লক্ষণসমূহ:
৩০-এর পর সতর্কতা: ৩০ বছর বয়স পার হওয়ার পর থেকে প্রতিটি নারীর নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করানো উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজে বাড়িতেও স্তন পরীক্ষা করা যেতে পারে। মধ্য তিরিশের পর চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত চেক-আপ করানো অত্যন্ত জরুরি।
ব্যথাহীন ফোলা অংশ: স্তনে যদি কোনো ব্যথাহীন ফোলা অংশ দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক সহজ হয়।
ত্বকের পরিবর্তন: স্তনের ত্বকের কোনো অংশ পুরু বা উঁচু হয়ে উঠলে, অথবা ত্বকের রঙ লাল বা কমলা হয়ে গেলে তা নজরে রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নিপলের পরিবর্তন: নিপলের গঠন পরিবর্তিত হলে, যেমন নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে বা কোনো রকম অস্বাভাবিক ডিসচার্জ হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।
আকৃতির পরিবর্তন: স্তনের আকৃতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
অকারণ ওজন হ্রাস: কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই যদি ওজন কমতে শুরু করে, তবে তা ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে।
প্রতিরোধের জন্য করণীয়:
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের কোনো সদস্যের স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তবে তাকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে এবং নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।
স্তন্যপান: সদ্যোজাত শিশুকে স্তন্যপান করানো স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ভাজাভুজি, তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড এবং অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলতে হবে।
তামাক ও অ্যালকোহল বর্জন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন এবং তামাক ব্যবহার অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।
চিকিৎসকরা জোর দিয়ে বলছেন, স্তন ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ দেখা গেলেই আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে সচেতন হলে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এই মারণ রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।