বর্ষার আগমন মানেই চারপাশে ঠান্ডা আর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে সর্দি-কাশি জনিত সমস্যা। এই মৌসুমে অনেকেই নাক বন্ধ, গলা খুসখুস বা একটানা কাশির যন্ত্রণায় ভোগেন। কোভিড-১৯ এর অন্যতম পরিচিত লক্ষণগুলির মধ্যে কাশিও একটি। বিশেষত, যদি আপনি খুশখুশে বা শুষ্ক কাশিতে জর্জরিত থাকেন, তাহলে অযথা চিন্তা না করে কিছু ঘরোয়া উপায়েই এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
কাশি কেন হয়? প্রকারভেদ ও কারণ
সাধারণত কাশি দু’প্রকার হয়: উৎপাদনহীন (Non-productive) এবং উৎপাদনশীল (Productive)।
উৎপাদনহীন কাশি সাধারণত শুকনো কাশি বা খুশখুশে কাশি নামেই পরিচিত। এর সঙ্গে কফ বা শ্লেষ্মা বের হয় না। এটি ফ্লু বা সর্দির কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকতে পারে, যা বেশ কষ্টকর।
উৎপাদনশীল কাশি হলো সেই কাশি যা ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা বা কফ বের করে শরীরকে পরিষ্কার করে।
ধোঁয়া, ধুলো, দূষণ, পরাগ এবং অন্যান্য অ্যালার্জির মতো পরিবেশগত কারণ ছাড়াও হাঁপানি, নিউমোনিয়া, সাইনোসাইটিস, যক্ষা, গ্যাস্ট্রো-এসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি) এবং আন্তঃদেশীয় ফুসফুসের মতো রোগও শুকনো কাশির অন্যতম কারণ হতে পারে। তবে এই ধরনের কাশি সারাতে বেশ কিছু ঘরোয়া দাওয়াই অত্যন্ত কার্যকর।
শুষ্ক কাশি তাড়াতে অব্যর্থ ঘরোয়া প্রতিকার
এখানে রইল কিছু সহজলভ্য এবং কার্যকর ঘরোয়া সমাধান যা আপনার খুশখুশে কাশি কমাতে সাহায্য করবে:
মধু: প্রাকৃতিক নিরাময়
কাশির জন্য মধু একটি প্রাচীন এবং পরীক্ষিত প্রতিকার। এটি প্রাকৃতিক প্রদাহবিরোধী (anti-inflammatory) গুণ সম্পন্ন এবং এর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল প্রভাব ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। মধু মুখের লালা গ্রন্থিগুলোকে বেশি পরিমাণে লালা উৎপাদনে উদ্দীপিত করে, যা গলার শুষ্কতা দূর করে এবং কাশি কমায়।
ব্যবহার: প্রাপ্তবয়স্করা দিনে অন্তত তিনবার এক চামচ মধু খেতে পারেন। এক কাপ গরম জল বা ভেষজ চায়ে মধু মিশিয়ে দিনে দু’বার পান করলেও উপকার মিলবে। তবে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু দেওয়া উচিত নয়।
হলুদ: সোনালী ঔষধি
খুশখুশে কাশির আরেক অব্যর্থ প্রতিকার হলো হলুদ। এতে থাকা কারকুমিন এবং এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য শুকনো কাশিসহ শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
ব্যবহার: গলার খুশখুশে ভাব কমাতে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক চা চামচ হলুদের রস, গরম দুধ বা জলে মিশিয়ে পান করুন। এছাড়া, দিনে ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হলুদের গুঁড়ো জলে গুলে পান করা যেতে পারে।
আদা: উষ্ণতার স্পর্শে মুক্তি
আদাতে বিদ্যমান অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয়। এটি শুষ্ক কাশির জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার।
ব্যবহার: খুশখুশে কাশি দূর করতে আদা চা পান করতে পারেন। অথবা, আধা চা চামচ আদার গুঁড়ো এক কাপ গরম জলে মিশিয়ে দিনে তিনবার পান করুন। এক চামচ আদার রস এবং মধু মিশিয়ে দিনে দু’বার পান করলেও উপকার পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত আদা পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই পরিমিত ব্যবহার করুন।
বাষ্প গ্রহণ (Steam Inhalation): শ্বাস-প্রশ্বাসে স্বস্তি
শুষ্ক কাশির সমস্যা কমাতে বাষ্প গ্রহণ খুবই উপকারী। এটি গলার শুষ্কতা কমায় এবং গলা ব্যথা ও কাশির তীব্রতা হ্রাস করে। জলে সামান্য টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিলে আরও ভালো ফল পাবেন।
ব্যবহার: একটি পাত্রে গরম জল নিয়ে তার ওপর সামান্য ঝুঁকে মাথার ওপর একটি তোয়ালে জড়িয়ে নিন। পাঁচ মিনিটের জন্য বাষ্প গ্রহণ করুন। স্টিম বাথও নিতে পারেন।
লবণ জল গার্গল: পরিচিত দাওয়াই
গলা ব্যথা কমাতে চিকিৎসকরা প্রায়শই লবণ জল দিয়ে গার্গল করার পরামর্শ দেন। এটি শুকনো কাশি দ্রুত সারাতে সহায়ক। লবণাক্ত জল গলার খুশখুশে ভাব কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহার: এক গ্লাস উষ্ণ জলে আধা টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। সামান্য ঠান্ডা হলে এই জল মুখে নিয়ে গলা পর্যন্ত রেখে তারপর বের করে ফেলে দিন। কাশি কমে না যাওয়া পর্যন্ত দিনে বেশ কয়েকবার এটি করুন।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি সাধারণত নিরাপদ এবং কার্যকর। তবে, যদি ঘরোয়া উপায় গ্রহণের পরেও আপনার কাশি না কমে, বিশেষ করে যদি সর্দির পাশাপাশি কাশি এবং উচ্চমাত্রায় জ্বর থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আপনার শুষ্ক কাশির সমস্যা মোকাবেলায় এই টিপসগুলি কতটা কার্যকর হলো? নিচে কমেন্ট করে জানান!