শুধু ডেঙ্গু নয়, মশার কামড়ে আরও ৭টি ভয়ঙ্কর রোগের ঝুঁকি! বর্ষায় বাড়ছে উদ্বেগ

বর্ষার মরশুম এলেই বাড়ে মশার উপদ্রব, আর সেই সঙ্গেই বাড়ে মশাবাহিত রোগের আতঙ্ক। বর্তমানে দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। শিশু থেকে বয়স্ক, কেউই বাদ নেই এই ডেঙ্গু আতঙ্ক থেকে। কিন্তু ডেঙ্গু ছাড়াও মশার কামড়ে আরও বেশ কিছু ভয়াবহ রোগ হতে পারে, যা প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই এই সময়ে মশাবাহিত রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রত্যেককে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।

মশাবাহিত ৭টি ভয়াবহ রোগ:
ডেঙ্গু ছাড়াও মশার কামড়ে যে সাতটি মারাত্মক রোগ হতে পারে, সেগুলি নিচে আলোচনা করা হলো:

ইয়েলো ফিভার: টাইগার মশা ও এডিস প্রজাতির কিছু মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এটি এক প্রকার ফ্লাবি ভাইরাস। আফ্রিকা এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বেশ কিছু দেশে এই রোগের ঝুঁকি বেশি। প্রাথমিকভাবে জ্বর এলেও পরে বমি এবং এক পর্যায়ে এটি মেনিনজাইটিসের রূপ নিতে পারে, যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

ডেঙ্গু: বর্তমানে এর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। এই রোগে শরীরে ব্যথা, লাল ফুসকুড়ি, মাংসপেশী ও হাড়ের জোড়ায় ব্যথা হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। একবার ডেঙ্গু সেরে গেলেও দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তা আরও মারাত্মক হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া: কয়েক বছর আগেও এই রোগ দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়েছিল। এতে ৩-৪ দিন জ্বর থাকে, তবে হাড়ের জোড়ায় মারাত্মক ব্যথা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে ক্ষতও দেখা যায়। একবার চিকুনগুনিয়া হলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

ম্যালেরিয়া: মশাবাহিত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া অত্যন্ত পরিচিত এবং মারাত্মক একটি রোগ। অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে এটি ছড়ায়। এই রোগে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। ম্যালেরিয়ার কার্যকর ঔষধ এখনও পুরোপুরি আবিষ্কৃত না হলেও, সতর্ক থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমানো যায়।

জিকা: এডিস ইজিপ্টাই, টাইগার মস্কিউটো এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস মশা জিকা ভাইরাস ছড়ায়। ২০১৫ সালে এটি মহামারী আকার ধারণ করেছিল। জিকার আক্রমণে ব্রাজিলে অসংখ্য শিশু মাইক্রোসিফেলি নামক ভয়াবহ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মায়, যার ফলে শিশুদের মাথার আকৃতি বিকৃত হয়ে যায়। গর্ভবতী মায়েরা জিকায় আক্রান্ত হলে শিশুদের ক্ষতির ঝুঁকি বেশি থাকে।

ওয়েস্ট নাইল ফিভার: এটি বয়স্ক এবং দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর ফলে মেনিনজাইটিস ও মায়োকার্ডাইটিস হতে পারে। অন্যান্য মশাবাহিত রোগের মতো কাঁপুনি, ঠান্ডা লাগা, জ্বর, মাথাব্যথা, ঝিমুনি দেখা দিতে পারে। এর কোনো ঔষধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।

লাইশম্যানিয়াসিস: গর্ভবতী নারী মশার কামড়ে এই রোগ ছড়ায়। প্রায় ৩০ ধরনের লাইশম্যানিয়াসিস জীবাণু থাকলেও, এর মধ্যে ১০টি মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করে। প্রাথমিকভাবে জ্বর ও মাথাব্যথা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে আলসার হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগ এতটাই ভয়াবহ যে দ্রুত চিকিৎসা না করালে লিভার, কিডনি সহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুও হতে পারে।

মশা থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়:
মশাবাহিত এসব রোগ থেকে বাঁচতে হলে মশা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য কিছু বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন:

ঘরে এবং বাইরে সব সময় মশা যাতে না কামড়াতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা অবলম্বন করুন।

মশা তাড়ানোর স্প্রে, লোশন বা কয়েল ব্যবহার করুন।

সন্ধ্যার পর জানালা-দরজা বন্ধ রাখুন বা মশারি ব্যবহার করুন।

বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেবেন না, কারণ জমে থাকা জলেই মশা ডিম পাড়ে।

ফুলদানি, এসি-র জল, টায়ার ইত্যাদিতে জমে থাকা জল নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

বর্ষাকালে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে মশার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে প্রত্যেককে শামিল হতে হবে। সচেতনতাই পারে এই ভয়াবহ রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে আপনার আর কোনো প্রশ্ন আছে কি?

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy