ছোট শিশুদের ত্বক, চোখ সহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়। তাদের চোখের মতো কোমল অঙ্গ অনেক সময় হঠাৎ করেই লাল হয়ে যায়। চোখ লাল হলে শুষ্ক ভাব দেখা দিতে পারে, চুলকানি হতে পারে এমনকি চোখ থেকে জলও পড়তে শুরু করে। কখনো কখনো চোখ লাল হওয়ার পিছনে বিভিন্ন গুরুতর রোগও দায়ী হতে পারে। শিশুদের চোখ কেন লাল হয় এবং এই সমস্যা থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, তা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিশুদের চোখ লাল হওয়ার সম্ভাব্য কারণসমূহ:
১. ঘন ঘন চোখ ডলা বা ঘষা: শিশুরা যদি বারবার চোখ ডলে বা ঘষে, তাহলে তাদের চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। এটি চোখ লাল হওয়ার একটি সাধারণ কারণ এবং সাধারণত অল্প সময়ের মধ্যে নিজেই ঠিক হয়ে যায়।
২. অ্যালার্জি বা আঘাত: অ্যালার্জি শিশুদের চোখ লাল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ধুলাবালি, ধোঁয়া, বা কোনো নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট (যেমন সাবান বা শ্যাম্পু) ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আবার, খেলাধুলা করার সময় চোখে আঘাত লাগলেও চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে চোখ থেকে জলও পড়তে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
৩. ভাইরাল ইনফেকশন: অ্যাডেনোভাইরাস (Adenovirus) এবং হারপিস (Herpes) ভাইরাসের কারণে শিশুদের মধ্যে ভাইরাল ইনফেকশন দেখা দেয়। এর ফলে চোখের ভিতরের অংশ লাল হয়ে যায়। এই ধরনের ইনফেকশনের কারণে শিশুদের অন্যান্য রোগও হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসা না করালে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
৪. ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন: সাধারণত হোমিফিলস (Haemophilus) বা স্ট্রেপ্টোকোকাস নিউমোনিয়া (Streptococcus pneumoniae) ব্যাকটেরিয়ার কারণে শিশুদের চোখে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দেখা দেয়। চোখের মণিপত্রের (আইরিস) আশপাশের অংশ লাল হওয়া এর অন্যতম লক্ষণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার চোখ হলুদও হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
৫. পোকার কামড়: খেলাধুলা করার সময় শিশুর চোখে কোনো পোকা কামড়ে দিতে পারে। অনেক সময় এই ধরনের ছোটখাটো সমস্যা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু মাঝে মাঝে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে এবং চোখে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুর চোখ লাল হলে কী করবেন?
শিশুর চোখ লাল হলে আতঙ্কিত না হয়ে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
ঠান্ডা জলের ঝাপটা: চোখে লালচে ভাব দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন। ধুলাবালি বা আঘাত লাগার ফলে এমন হলে, এটি আরাম দিতে পারে। এরপর মোলায়েম তোয়ালে বা পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে চোখ আলতো করে পরিষ্কার করুন।
গরম সেঁক: একটি সুতির কাপড় হালকা গরম জলে ভিজিয়ে নিংড়ে নিন এবং সেই উষ্ণ কাপড় দিয়ে চোখ সেঁক দিন। আঘাত বা কোনো পোকার কামড়ের ফলে চোখ লাল হলে এই সেঁকের ফলে ব্যথা ও ফোলাভাব কমতে পারে।
পণ্যের পরিবর্তন: যদি কোনো নির্দিষ্ট সাবান, শ্যাম্পু বা কসমেটিক প্রোডাক্ট ব্যবহারের পর অ্যালার্জির কারণে চোখ লাল হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেই সামগ্রীগুলি পাল্টে ফেলুন।
চোখ ডলার অভ্যাস বন্ধ করুন: সন্তান বারবার নিজের চোখ চুলকালে বা ডললে তাদের এই অভ্যাস ছাড়ান, কারণ এতে সংক্রমণ আরও ছড়াতে পারে বা চোখের ক্ষতি হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রপ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে লাল ভাব, চুলকানি এবং অন্যান্য অস্বস্তি কমবে।
শিশুদের চোখের সমস্যা অবহেলা না করে, লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শিশুদের চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।