শরীরে কীভাবে ফ্যাট জমে? দেখুন কী বলছে গবেষকরা

ওজন বেড়ে গেলে যদি ডাক্তার খুব বকাবকি শুরু করেন, তা হলে বাড়তি ফ্যাটের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি কী কী করেন? নিশ্চিতভাবেই খাওয়াদাওয়ায় রাশ টানেন? জিম বা সাঁতারের ক্লাসে যোগ দেন? কিন্তু ঠিক কোন পদ্ধতিতে শরীর থেকে ফ্যাট বেরিয়ে যায়, তা কি জানেন?

প্রথমেই বুঝতে হবে, শরীরে ফ্যাট জমার কারণগুলি কী। আর যে জিনিস এতই খারাপ, তা জমিয়েই বা রাখে কেন আমাদের শরীর? ফ্যাট যেখানে জমিয়ে রাখে শরীর, সেই কোষগুলি মূলত এনার্জির ভাঁড়ার। সভ্যতার আদিতে যখন খাদ্যাভাব দেখা দিত, খরা বা বন্যায় নষ্ট হয়ে যেত চাষআবাদ বা শত্রুর কবল থেকে বাঁচার জন্য প্রাণপনে পালানোর চেষ্টা করত মানুষ, তখন কাজে দিত এই জমিয়ে রাখা এনার্জি। তা ভাঙিয়েই সচল থাকত শরীরের বাকি অঙ্গগুলি। যাঁর শরীরে এনার্জির ভাঁড়ার যত বেশি, তিনি তত বেশিদিন বাঁচবেন – এই হচ্ছে সহজ হিসেব।

কিন্তু আপনি তো আর জঙ্গলে থাকেন না, শত্রুর তাড়া খেয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে পালাচ্ছেনও না – উলটে দেদার পিজ়া, পাস্তা, কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি ইত্যাদি লোভনীয় খাদ্য খেয়ে যাচ্ছেন কবজি ডুবিয়ে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে – আপনার আপৎকালীন এনার্জির ভাঁড়ার থেকে কিছুই খরচ হচ্ছে না, উলটে তার পরিমাণ বাড়ছে, আকারে বড়ো হচ্ছে ফ্যাট সেল। এমনিতেই এই উপমহাদেশে কিছু বছর আগেও এত খরা-দুর্ভিক্ষ হয়েছে যে আমাদের শরীরের ফ্যাট জমানোর প্রবণতাই তৈরি হয়ে গিয়েছে! একটা সময়ে শরীর এই এনার্জি রাখার জন্য আর ফ্যাট সেলও খুঁজে পায় না। তখন তা নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জমা হতে থাকে। রাতারাতি কেউ মোটা হন না, ধীরে ধীরে শরীরে এই পরিস্থিতিটা তৈরি হয়।

নানা শারীরবৃত্তীয় কাজ করার জন্য আমাদের শরীরের প্রচুর এনার্জি লাগে। আপনার শরীরে ঠিক কতটা এনার্জি খরচ হবে, তা নির্ভর করছে জিন আর শরীরে জমে থাকা ফ্যাটের পরিমাণের উপর। ফ্যাট আপনার ক্যালোরি পোড়ার হার কমায়, মাসল আবার অ্যাকটিভ থাকার জন্য প্রচুর ক্যালোরি বার্ন করে। তাই যাঁরা রোগা হওয়ার বা মেটাবলিক রেটের হার বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাঁরা শরীরে মাসলের পরিমাণ বাড়ানোর উপর জোর দিন। সেই সঙ্গে যদি সঠিক খাবার খান আর এক্সারসাইজ় করেন, তা হলে ফ্যাটের বিসর্জনের বাদ্যি বেজে যাবে। দেখবেন মাসল মাস বাড়লে আপনার স্ট্রেস আর মন খারাপও কমতে আরম্ভ করছে! মনে রাখবেন, ফ্যাটের হাত থেকে মুক্তি না পেলে আপনার শরীরে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহের হার বাড়বে, হরমোনের ভারসাম্য হারাবে, ফলে আরও নানা রোগভোগ বাসা বাঁধবে।

শারীরিক কার্যকলাপের মাত্রা বাড়ালে স্বাভাবিকভাবেই ফ্যাট পোড়ার হার বাড়বে। দেখবেন পরিশ্রম করলেই আমাদের ঘাম হয়, দ্রুত শ্বাস পড়ে অর্থাৎ প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড বেরোয়। যাঁদের ঘাম কম হয়, তাঁরা নিশ্চিতভাবেই প্রস্রাবের বেগ অনুভব করবেন বার বার, এই তিনটি পদ্ধতিতেই শরীর ফ্যাটকে বিসর্জন দেয়। তার পর ধীরে ধীরে ফ্যাট সেলগুলিও ছোট হতে আরম্ভ করে। তবে বুঝতেই পারছেন, এর কোনওটাই রাতারাতি হয় না। ধৈর্য করে অপেক্ষা করতে পারলে তবেই ফল পাবেন হাতে-নাতে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy