শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার, যা বিপাকে সাহায্য করে, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে এবং খাদ্য হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা লিভারকে সুস্থ রাখার উপর বারবার জোর দেন। তবে অনেক সময় আমাদের অসচেতনতার কারণে লিভারের সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। পেটে ব্যথা, বমি, অতিরিক্ত ক্লান্তি—এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবিলম্বে সতর্ক হওয়া জরুরি, কারণ এগুলো ‘লিভার এনলার্জমেন্ট’ বা ‘হেপাটোমেগালি’-র ইঙ্গিত হতে পারে।
লিভার বড় হওয়ার নেপথ্যে কী?
আমাদের দেহের মোট ওজনের মাত্র ২ শতাংশ হলো লিভারের ওজন, এবং এর স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য সাধারণত ১৫ সেন্টিমিটারের কাছাকাছি থাকে। এই অঙ্গটির আকৃতি যখন ১৫ থেকে ১৬ সেনিমিটার ছাড়িয়ে যায়, তখনই তাকে ‘লিভার এনলার্জমেন্ট’ বা ‘হেপাটোমেগালি’ বলা হয়।
লিভার বড় হওয়ার প্রধান কারণ হলো ফ্যাট জমা হওয়া, যা ‘ফ্যাটি লিভার’ নামে পরিচিত। এই ফ্যাটি লিভারের পিছনেও একাধিক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
মদ্যপান: অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে এবং এটি অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের অন্যতম কারণ।
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও ফ্যাট জাতীয় খাবার: প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া এবং ফ্যাট সমৃদ্ধ তৈলাক্ত খাবার বেশি খেলে লিভারে ফ্যাট জমার প্রবণতা বাড়ে।
কম ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবও লিভারের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
যদি আপনার পেটে নিয়মিত ব্যথা হয়, তাহলে লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT) বা সেরোলজি টেস্ট করানোর জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
সমস্যা দূর করার উপায়: জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
লিভারের এই সমস্যা দূর করতে চাইলে প্রাথমিকভাবে জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের ওপর বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
মিষ্টি খাবার ত্যাগ: মিষ্টি খাবার লিভারের প্রধান শত্রু। এই ধরনের খাবার থেকে প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। মিষ্টি লিভারে ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে, যা ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়।
মদ্যপান বর্জন: মদ্যপান লিভারের প্রচণ্ড ক্ষতি করে, এটি গবেষণায় বারবার প্রমাণিত হয়েছে। তাই সম্পূর্ণভাবে মদ্যপান ত্যাগ করা লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য অত্যাবশ্যক।
ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন: বাইরের তৈলাক্ত ভাজাভুজি এবং অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন বাদাম, অ্যাভোকাডো, এবং অলিভ অয়েল সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা যেতে পারে।
শাকসবজি ও ফল: ভিটামিন ও খনিজ পরিপূর্ণ শাক, সবজি এবং ফল বেশি করে খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। এগুলো লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়াম করা লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং লিভারে ফ্যাট জমার প্রবণতা কমায়।
ওজন কমান: যদি আপনার ওজন বেশি থাকে, তবে দ্রুত তা কমানোর চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত ওজন ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রধান কারণ।
লিভার আমাদের শরীরের একটি নীরব কর্মী, তাই এর প্রতি যত্নশীল হওয়া অত্যন্ত জরুরি। উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে আপনি লিভারকে সুস্থ রাখতে পারবেন এবং গুরুতর সমস্যা এড়াতে পারবেন।