মিষ্টি না খেলেও শরীরে ডায়াবেটিস ঘাপটি মেরে বসে, জেনেনিন ৬ টি লক্ষণ

আপনি কি জানেন, আপনার অজান্তেই আপনার শরীর ডায়াবেটিসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? রক্তে শর্করার মাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, কিন্তু ডায়াবেটিস হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার মতো যথেষ্ট নয়, সেই অবস্থাকেই বলা হয় ‘প্রি-ডায়াবেটিস’। অনেকেই ভুল ধারণা করেন যে কেবল চিনি খেলেই ডায়াবেটিস হয়, কিন্তু এর নেপথ্যে লুকিয়ে থাকে আরও অনেক কারণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রি-ডায়াবেটিস এমন একটি পর্যায় যা সময়মতো শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ভয়াবহ ডায়াবেটিস থেকে বাঁচা সম্ভব। আপনার শরীর এই ৬টি লক্ষণ দিয়ে যে নীরব ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেগুলি চিনে নিয়ে আজই নিজেকে সুরক্ষিত করুন!

প্রি-ডায়াবেটিসের ৬টি নীরব লক্ষণ: কখন সতর্ক হবেন?

প্রি-ডায়াবেটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়শই কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না, যা একে আরও বিপজ্জনক করে তোলে। তবে অবস্থা বাড়ার সাথে সাথে কিছু সাধারণ লক্ষণ চোখে পড়তে পারে:

১. অতিরিক্ত তৃষ্ণা: যদি আপনার মনে হয় যে ক্রমাগত গলা শুকিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি জল পান করছেন, এটি প্রি-ডায়াবেটিসের একটি প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে।

২. ঘন ঘন প্রস্রাব: বিশেষ করে রাতে যদি বারবার শৌচাগারে যেতে হয়, তবে এটি আপনার রক্তে শর্করার অস্বাভাবিক মাত্রার লক্ষণ হতে পারে।

৩. ক্লান্তিবোধ: সারাদিন অলস লাগা, কাজে মন না বসা বা সব সময় শক্তিহীন বোধ করাও প্রি-ডায়াবেটিসের একটি পরিচিত লক্ষণ।

৪. দ্রুত ওজন বৃদ্ধি: যদি আপনার ওজন দ্রুত বাড়তে শুরু করে, বিশেষত পেটের আশেপাশে মেদ জমতে থাকে, তাহলে এটি ইনসুলিন প্রতিরোধের লক্ষণ হতে পারে।

৫. ঝাপসা দৃষ্টি: চোখে ঝাপসা দেখা বা কোনও জিনিস স্পষ্টভাবে দেখতে অসুবিধা হওয়াকে অবহেলা করবেন না। এটি রক্তে শর্করার উচ্চতার কারণে হতে পারে।

৬. ত্বকের চুলকানি: ত্বকে অস্বাভাবিক চুলকানি বা শুষ্কতার সমস্যাও প্রি-ডায়াবেটিসের একটি ইঙ্গিত হতে পারে।

যদি উপরের এক বা একাধিক লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

কারণ কী? জীবনযাত্রা থেকে জিনগত প্রভাব

প্রি-ডায়াবেটিসের কারণগুলি প্রায়শই আমাদের জীবনযাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত:

  • অতিরিক্ত ওজন: শরীরের অতিরিক্ত মেদ ইনসুলিনকে সঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দেয়।
  • শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • জিনগত প্রভাব: পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে আপনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

প্রতিরোধের পথ আপনার হাতেই: সুস্থ জীবনযাত্রাই চাবিকাঠি

সুসংবাদ হলো, প্রি-ডায়াবেটিস কেবল প্রতিরোধযোগ্যই নয়, এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলিও অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এর জন্য কিছু সহজ জীবনযাত্রার পরিবর্তন প্রয়োজন:

  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: যদি আপনার ওজন বেশি হয়, তবে ওজন কমানো প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করলে শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার: আপনার খাদ্যতালিকায় ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং কম চর্বি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন।
  • চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট বর্জন: চিনিযুক্ত পানীয় ও খাবার এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার কম খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এটি ত্যাগ করা জরুরি।
  • মানসিক চাপ হ্রাস: মানসিক চাপ রক্তে শর্করার মাত্রাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই যোগব্যায়াম, ধ্যান বা পছন্দের অন্য যেকোনো কৌশল অবলম্বন করে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।

মনে রাখবেন, প্রি-ডায়াবেটিস একটি সতর্ক সংকেত, রোগ নয়। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে আপনি ডায়াবেটিসের জটিলতা থেকে নিজেকে এবং আপনার প্রিয়জনদের সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। আপনার সুস্থ ভবিষ্যৎ আপনার হাতেই!

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy