মাথাব্যথা এবং ক্লান্তির মতো দৈনন্দিন কিছু উপসর্গই যখন দিনের পর দিন চলতে থাকে, তখন তা স্বাভাবিক না-ও হতে পারে। মস্তিষ্কে ক্যান্সার বা টিউমার (Brain Tumour) তুলনামূলকভাবে কম হলেও এটি প্রায় সব ক্ষেত্রেই জীবনঘাতী হতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো, ব্রেইন টিউমারের লক্ষণগুলো খুব সহজে শনাক্ত করা যায় না; বরং তা সাধারণ শারীরিক সমস্যার মতো মনে হয়।
আপনার শরীরের এই ৮টি সূক্ষ্ম পরিবর্তন গুরুতর কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, তা জেনে নিন:
১. ক্রমাগত মাথাব্যথা (Persistent Headaches)
সাধারণ মাথাব্যথা এবং ব্রেইন টিউমার-জনিত মাথাব্যথার মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো, এটি সহজে দূর হয় না। এই মাথাব্যথা দিনের পর দিন অব্যাহত থাকে এবং অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই শুরু হয়। যদি কোনো পরিচিত ওষুধেও এই মাথাব্যথা না কমে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন (Vision Loss)
দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়াটা একটি খুব সূক্ষ্ম পরিবর্তন, যা অনেকে সহজে বুঝতে পারেন না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটিকে বাইটেম্পোরাল হেমিয়ানোপসিয়া বলা হয়। এই সমস্যার কারণে ঘন ঘন ঘরের আসবাবপত্রে ধাক্কা খাওয়া বা গাড়ি চালানোয় অস্বাভাবিক ভুল করার প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
৩. কথা বলার সমস্যা (Speech Difficulty)
কথা বলতে সমস্যা হওয়া, যেমন তোতলানো বা কথা জড়িয়ে যাওয়া, কোনো পরিচিত জিনিস বা মানুষের নাম সহজে মনে করতে না পারা, অথবা অন্যের কথা বুঝতে সমস্যা হওয়া ব্রেইন টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
৪. আচরণগত পরিবর্তন ও আগ্রাসী মনোভাব (Mood Swings and Aggression)
ব্রেইন টিউমার রোগীদের মধ্যে ডিপ্রেশন (Depression), অ্যাংজাইটি (Anxiety) বা অতিরিক্ত খিটখিটে মেজাজের প্রবণতা দেখা যায়। তারা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতি আগ্রহ দেখায় এবং আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন করতে পারে।
৫. শ্রবণশক্তি হারানো ও কানে তালা লাগা (Hearing Loss and Tinnitus)
একদিকের কানে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া বা একেবারেই কিছু শুনতে না পারা, অথবা কানে তালা লাগার মতো বা অবিরত ঘণ্টার মতো শব্দ (Tinnitus) শোনা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬. বন্ধ্যাত্ব বা হরমোনের সমস্যা (Infertility)
মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের কাজ হলো শরীরের বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা। এই গ্ল্যান্ডে টিউমার হলে তা প্রভাবিত হতে পারে, যার ফলে নারীরা গর্ভধারণে অক্ষম হতে পারেন অথবা সন্তান প্রসবের পর স্তন্যদানে অক্ষম হতে পারেন।
৭. ভারসাম্যহীনতা (Loss of Balance)
হাঁটার সময় ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হওয়া, বিশেষ করে অন্ধকারে হাঁটতে সমস্যা বা একদিকে ঝুঁকে হাঁটার প্রবণতা মস্তিষ্কের সেরেবেলাম (Cerebellum) অংশে টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
৮. ক্লান্তি ও পেশী দুর্বলতা (Fatigue and Weakness)
মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স অংশটি সারা শরীরে পেশী নিয়ন্ত্রণ করে। এই অংশে টিউমার থাকলে শরীরে ব্যথা না হলেও হাত-পায়ে দুর্বলতা এবং এসব অঙ্গ নড়াচড়া করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে যেকোনো একটি বা একাধিক উপসর্গ দীর্ঘদিন ধরে আপনাকে কষ্ট দেয় এবং স্বাভাবিক চিকিৎসায় উপশম না হয়, তবে দ্রুত নিউরোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা আবশ্যক।