মাথাব্যথা নাকি মাইগ্রেন? নারীদের কেন বেশি হয় এই সমস্যা জেনেনিন তবে

মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেন – এই দুটিকে প্রায়শই এক মনে করা হলেও, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। মাইগ্রেন এক জটিল স্নায়বিক সমস্যা, যার কারণ বহুবিধ। প্রখর সূর্যের তাপ, একটানা কম্পিউটার বা মোবাইলের সামনে বসে থাকা এর অন্যতম কারণ হতে পারে। এছাড়া, অপর্যাপ্ত ঘুম, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, চোখের ক্লান্তি, সাইনাস প্রদাহ অথবা মস্তিষ্কের রক্তনালীতে কোনো সমস্যা দেখা দিলেও তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। অনেক সময় এই তীব্র মাথাব্যথার সঙ্গে বমিভাব, চোখে যন্ত্রণা এমনকি মুখ ও চোয়ালে ব্যথাও অনুভূত হয়।

নিউরোলোজিস্টরা মনে করেন, অগোছালো জীবনযাত্রা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মাইগ্রেনের জন্য দায়ী। কিন্তু এই সমস্যায় কারা বেশি ভোগেন জানেন?

নারীরা কেন মাইগ্রেনে বেশি আক্রান্ত হন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে মাইগ্রেনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এর মূল কারণ হলো হরমোনের তারতম্য। নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাব মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ। এই কারণেই অনেক মেয়ের বয়ঃসন্ধিকালে প্রথম মাসিকের (পিরিয়ড) সঙ্গেই মাইগ্রেনের সমস্যা শুরু হতে পারে।

অনেক নারীর ক্ষেত্রে আবার মেনোপজের (রজোনিবৃত্তি) পর এই সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। তবে, বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন যে, যেসব নারী ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল (গর্ভনিরোধক বড়ি) সেবন করেন, তাদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকরা আরও বলছেন, জরায়ুতে অস্ত্রোপচারের পর অনেক সময় হরমোন থেরাপির কিছু ওষুধ দেওয়া হয়, যা অনেক নারীর মাইগ্রেনের সমস্যাকে নতুন করে উস্কে দিতে পারে।

মাইগ্রেন চেনার উপায় ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান
মাইগ্রেন মূলত একটি স্নায়বিক সমস্যা, যা সাধারণ মাথাব্যথা থেকে অনেকটাই আলাদা। গবেষকরা বলছেন, যদি কারো এক মাসের মধ্যে ১৫ দিন মাথাব্যথা থাকে এবং এর মধ্যে ৮ দিন তীব্র মাথাব্যথার সঙ্গে শারীরিক কোনো (যেমন বমিভাব, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা) সমস্যা থাকে, তাহলে এই মাথাব্যথার কারণ মাইগ্রেন।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, মাইগ্রেনের সমস্যায় অনেকে পেইন কিলার সেবন করে থাকেন, যা স্বল্প সময়ের জন্য আরাম দিলেও দীর্ঘমেয়াদে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি। যেমন: চকলেট, রেড ওয়াইন, ড্রাই ফ্রুটস, প্রক্রিয়াজাত খাবারে ব্যবহৃত কৃত্রিম মিষ্টি, ডেলি মিটস (যেমন হ্যাম, হট ডগস, সসেজ), এবং চিজ জাতীয় খাবার। অনেক সময় কোনো বিশেষ সুবাস বা গন্ধও মাইগ্রেনের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

প্রতিকার ও নিয়ন্ত্রণ:
মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি সঠিক ডায়েট লিস্ট মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রাকৃতিক উপায়েও এই সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়:

ইউক্যালিপটাস অয়েল (Eucalyptus oil): এই তেল দিয়ে মাথা ও কপালে ম্যাসাজ করলে আরাম পাওয়া যায়।
মিন্ট অয়েল (Mint oil): পুদিনা তেলও মাথাব্যথা কমাতে কার্যকর।
ল্যাভেন্ডার অয়েল (Lavender oil): ল্যাভেন্ডার তেলের শান্তিদায়ক গুণ মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
মাইগ্রেন একটি জটিল রোগ হলেও সঠিক জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে এটিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই মাথাব্যথার সঙ্গে যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলি দেখা যায়, তবে অবশ্যই একজন নিউরোলোজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy