করোনাকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন ডি-এর অপরিহার্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর থেকেই এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে। সাধারণত খাবার ও সকালের রোদের আলো থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পাওয়া গেলেও, শহুরে জীবনযাত্রা ও পুষ্টিকর খাবারের অভাবের কারণে অনেকেই পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাচ্ছেন না, যার ফলস্বরূপ শরীরে এর ঘাটতি প্রকট হচ্ছে। কিন্তু এই ‘সানশাইন ভিটামিন’-এর অভাব কেবল হাড়ের সমস্যা নয়, আরও অনেক গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
কেন ভিটামিন ডি শরীরের জন্য এত জরুরি?
ভিটামিন ডি শরীরের জন্য এক বহুমুখী উপকারী উপাদান। এটি শিশুদের রিকেট রোগ, বড়দের অস্টিওমিলেশিয়া (হাড়ের নরম হয়ে যাওয়া) এবং বয়স্কদের হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির মধ্যে একটি হলো অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ ও ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর সঠিক বিকাশ ও বৃদ্ধিতে ভিটামিন ডি-এর অবদান অনস্বীকার্য। এর অভাবে শিশুর হাড় নরম থেকে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি করে।
ভিটামিন ডি-এর অভাবের লক্ষণগুলো কী কী?
শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা প্রাথমিকভাবে অনেকেই উপেক্ষা করেন:
হাড় ও গাঁটের সমস্যা: অত্যাবশ্যকীয় অভাবে পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যেতে পারে। এছাড়া গাঁটে ব্যথা এবং বৃদ্ধ বয়সে বাতের সমস্যা ভিটামিন ডি-এর অভাবের অন্যতম লক্ষণ। থাইরয়েডে সমস্যা, মেরুদণ্ডের ব্যথা এবং অকালে দাঁত পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ঘনঘন অসুস্থ হওয়া এবং বিভিন্ন রোগ সারতে দেরি হওয়া শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবের স্পষ্ট ইঙ্গিত। এর অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে, এমনকি ছোটখাটো ঘা শুকাতেও অনেকটাই সময় লেগে যায়।
ক্লান্তি ও দুর্বলতা: অকারণে ক্লান্তিভাব, ঝিমুনি এবং শুয়ে-বসে থাকার তীব্র ইচ্ছে হতে পারে শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণে।
চুল পড়া: অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। খাবারে ভিটামিন ডি কম থাকলে চুল ঝরে যেতে পারে।
সাধারণ অস্বস্তি: শরীরে ম্যাজম্যাজে ভাব, হাত-পায়ে যন্ত্রণা, জয়েন্টে ব্যথা— এগুলোও ভিটামিন ডি-এর অভাবের লক্ষণ হতে পারে।
অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস: হঠাৎ ওজন কমতে থাকা শরীরের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়ার পরও ওজন কমা ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণেও হতে পারে।
দৈনিক ভিটামিন ডি-এর চাহিদা:
কার শরীরে কতটুকু ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজন, তা নির্ভর করে বয়স অনুযায়ী। সাধারণত, পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি এবং ১০০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যালসিয়ামের চাহিদা থাকে। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০ মাইক্রোগ্রাম। বয়স অনুপাতে ভিটামিন ডি-এর আদর্শ মাত্রা ২৫-১০০ মিলিগ্রাম।
সুতরাং, ভিটামিন ডি-এর অভাবকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। নিয়মিত সূর্যালোক গ্রহণ, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (যেমন – তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, দুধ) গ্রহণ এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে এই অপরিহার্য ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।