ভরা মিটিংয়ে পেটের গুড়গুড়? এই লজ্জার শব্দকে ‘না’ বলুন! জেনে নিন নীরব থাকার সহজ উপায়

গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, শান্ত ক্লাসরুম, কিংবা গভীর রাতে নীরব বিছানা—হঠাৎ করেই পেটের ভেতর থেকে শুরু হলো সেই পরিচিত ‘গুড়গুড়’ আওয়াজ। প্রথমে মৃদু হলেও, নীরব পরিবেশে এই সামান্য শব্দই অনেক সময় মনে হতে পারে ধারাবাহিক পটকা ফাটার মতো! আর এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে কার না খারাপ লাগে? আসলে এই শব্দ পাকস্থলী ও খাদ্যনালির সংকোচন-প্রসারণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অথবা খাদ্য চলাচলের সময়কার মৃদু আওয়াজ। কিন্তু যখন এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটাই জনসমক্ষে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন এর সমাধান খোঁজাটা জরুরি হয়ে পড়ে।

পেটের আওয়াজ কেন হয়? যখন স্বাভাবিক শব্দও অস্বস্তিকর
মূলত হজম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এই শব্দগুলো হয়। খাওয়ার পর এই আওয়াজ বেশি হয়, কারণ পাকস্থলী খাবার হজম করার জন্য আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। আবার, যখন পেটে ক্ষুধা লাগে বা খাবারের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখনও পাকস্থলীর ওপর এক ধরনের প্রভাব পড়ে, যার ফলেও এমন শব্দ হতে পারে, যাকে আমরা ‘পেট ডাকা’ বলি।

কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি যখন আপনার বিব্রতকর অবস্থার কারণ হয়, তখন কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।

মিটিংয়ের আগে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে নীরব থাকার কৌশল:
১. খাওয়ার সময় ও পরিমাণ: গুরুত্বপূর্ণ কোনো মিটিং শুরুর অন্তত আধঘণ্টা আগেই আপনার খাওয়া সেরে ফেলার চেষ্টা করুন। তবে ভরপেট খাবেন না। ভারী খাবার, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বা ভাজাপোড়া এই সময়ে একেবারেই এড়িয়ে চলুন। এগুলো হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং গ্যাস তৈরি করে শব্দের কারণ হতে পারে।

২. খাওয়ার ধীর গতি ও নীরবতা: যেকোনো খাবারই ধীরে ধীরে, মনোযোগ দিয়ে খান। তাড়াহুড়ো করে খেলে বা খাওয়ার সময় কথা বললে পেটে অতিরিক্ত বাতাস ঢোকে, যা শব্দের কারণ। তাই খাওয়ার সময় কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

৩. খালি পেটে নয়, বেশি ভরা পেটেও নয়: ক্ষুধার্ত থাকলেও পেটের আওয়াজ বাড়তে পারে। তাই মিটিংয়ের আগে একেবারে খালি পেটেও থাকবেন না। সামান্য কিছু হালকা খাবার, যেমন একটি ফল বা কয়েকটি বিস্কুট খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, কৃত্রিম চিনিযুক্ত খাবারও অনেক সময় পেটে অস্বস্তিকর শব্দ তৈরি করতে পারে, তাই সেগুলো এড়িয়ে চলুন।

৪. বদহজম এড়ান: যে খাবার খেলে আপনার বদহজম হওয়ার প্রবণতা থাকে, সেগুলো এই সময়ে এড়িয়ে চলুন অথবা পরিমাণে খুব কম খান। আপনার শরীর কোন খাবারকে সহজে হজম করতে পারে, তা আপনিই সবচেয়ে ভালো জানেন।

৫. জল পানের সঠিক নিয়ম: খানিকক্ষণ পরপর জল পান করুন, এটি হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। তবে ব্যায়ামের ঠিক আগে বা ব্যায়ামের সময় অতিরিক্ত জল খাবেন না, কারণ এতেও সাময়িক অস্বস্তি হতে পারে।

৬. মানসিক চাপ ও নেশা বর্জন: মানসিক চাপ, ধূমপান ও মদ্যপানও পেটের এই অস্বস্তিকর শব্দের অন্যতম কারণ। এগুলো শরীরের হজম প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এই অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
পেটের গুড়গুড় আওয়াজ বেশিরভাগ সময়ই স্বাভাবিক হলেও, যদি এর সঙ্গে পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া) কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যাও দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। কারণ, এই লক্ষণগুলো কোনো গভীর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

সামান্য সচেতনতা এবং খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন এনেই আপনি এই বিব্রতকর পেটের আওয়াজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এবং জনসমক্ষে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে থাকতে পারেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy