ব্রেন টিউমার, মস্তিষ্কের নীরব ঘাতক! প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিনুন, জীবন বাঁচান

‘ব্রেন টিউমার’ শব্দটা শুনলেই আতঙ্কে বুক কেঁপে ওঠে। মস্তিষ্কের ভেতরে ক্যান্সার কোষ বা নন-ক্যান্সার কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই হলো ব্রেন টিউমার। এই টিউমার শুধু মস্তিষ্কেই উৎপন্ন হয় না, বরং শরীরের অন্য কোনো অংশে তৈরি হয়েও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রেন টিউমার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে নিরাময়যোগ্য। কিন্তু এই লক্ষণগুলিকে অবহেলা করলে তা রোগীর জীবন পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে। তাই ব্রেন টিউমারের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।

ব্রেন টিউমারের প্রকার ও চিকিৎসা:

ব্রেন টিউমারের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। টিউমারটি কত দ্রুত বাড়ছে, মস্তিষ্কের কোন অংশে হয়েছে, স্নায়ু কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং টিউমারটি ক্যান্সারজনিত (ম্যালিগন্যান্ট) নাকি নন-ক্যান্সারজনিত (বিনাইন) – এই সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে চিকিৎসকরা রোগীর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করেন। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

যে লক্ষণগুলো কখনো অবহেলা করবেন না:

মস্তিষ্কের টিউমারের লক্ষণগুলো টিউমারের আকার, অবস্থান এবং বৃদ্ধির গতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, প্রাথমিক অবস্থায় অনেকের মধ্যেই নিম্নলিখিত সাধারণ লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে, যা কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়:

১. দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন: চোখে ঝাপসা দেখা, দুটি জিনিসকে একটি দেখা (ডাবল ভিশন), অথবা পাশের দৃষ্টিশক্তি কমে আসা। ২. স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন: মুখের স্বাদ চলে যাওয়া বা কোনো কিছুর গন্ধ বুঝতে না পারা। ৩. শারীরিক অসঙ্গতি: হাত-পা কাঁপা, কাঁপুনি দেওয়া বা শরীরের যেকোনো এক দিক অবশ হয়ে যাওয়া। ৪. মৃগী বা খিঁচুনি: পূর্বে এমন ইতিহাস না থাকলেও হঠাৎ মৃগী বা খিঁচুনি হওয়া। ৫. ভারসাম্যহীনতা: শরীরের ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া, হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাওয়া বা স্বাভাবিকভাবে হাঁটার ক্ষমতা হারানো। ৬. বোঝার ক্ষমতা হ্রাস: সাধারণ বিষয় বুঝতে না পারা, বিভ্রান্তি বা মনোযোগের অভাব। ৭. ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন: মেজাজ বা ব্যক্তিত্বে আকস্মিক ও অস্বাভাবিক পরিবর্তন। ৮. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। ৯. বমি বমি ভাব বা বমি: ঘন ঘন বমি পাওয়া বা বমি হওয়া, বিশেষত সকালের দিকে।

বিশেষ লক্ষণ: তীব্র মাথাব্যথা এবং মস্তিষ্কে চাপ:

উপরোক্ত লক্ষণগুলির পাশাপাশি আরও দুটি উপসর্গ আছে যা ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রে প্রায়শই দেখা যায়:

  • তীব্র মাথাব্যথা: এই মাথাব্যথা সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টদায়ক হতে পারে। ব্যথা খুব তীব্র হয় এবং এটি প্রতিদিনই হতে পারে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এর তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কে টিউমার জনিত মাথাব্যথা সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আরও তীব্র হয় এবং কাশি বা চাপ দিলে ব্যথা বাড়ে। সাধারণ ব্যথানাশকে এই ব্যথা কমে না।
  • মাথায় অতিরিক্ত চাপ: মাথায় ক্রমাগত একটি অস্বাভাবিক চাপ বা অস্বস্তি অনুভব করা, যা রোগীর নিজেকে অসুস্থ মনে হতে পারে। এটি মস্তিষ্কের ভেতরে টিউমারের কারণে সৃষ্ট চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

সুতরাং, এই ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে তাকে সামান্য ভেবে ব্যথানাশক খেয়ে দমিয়ে রাখবেন না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় জীবন বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy