বিশ্বজুড়ে শিশুদের স্থূলতা বর্তমানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অনেক দেশেই এর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শৈশবের স্থূলতা কেবল শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্যকে নয়, বরং তাদের মানসিক সুস্থতা এবং সামগ্রিক জীবনযাপনের মানকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। স্থূলকায় শিশুদের মধ্যে একসময় শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যেত এমন গুরুতর রোগ যেমন টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
শৈশবে স্থূলতার পেছনে জীবনযাপনের ধরন, জেনেটিক্স, পরিবেশগত প্রভাব এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণ দায়ী। এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজন শিক্ষা, জীবনযাপনে পরিবর্তন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার সমন্বয়। কিছু অভ্যাস শিশুদের স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের কারণ হতে পারে। এই কারণগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে এই সমস্যা থেকে শিশুদের দূরে রাখা সহজ হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই কারণগুলো:
১. নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস
প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয়, ফাস্টফুড খাওয়া এবং ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্যের পরিমাণ কম গ্রহণ করা শিশুদের অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এবং পুষ্টির অভাবের প্রধান কারণ। ক্যালোরি-ঘন খাবার, বিশেষ করে উচ্চ চর্বি এবং চিনিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার অভ্যাস শিশুদের স্থূলতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। শৈশবে সঠিক পুষ্টির অভাব আজীবন স্বাস্থ্য সমস্যার ভিত্তি তৈরি করতে পারে।
২. শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম (টিভি, ভিডিও গেম, স্মার্টফোন) এবং খেলাধুলা বা অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপে শিশুদের অংশগ্রহণ কম থাকা তাদের স্থূলতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ সরাসরি ওজন বৃদ্ধি এবং দুর্বল হৃদযন্ত্র ও পেশীর মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত।
৩. জেনেটিক্স
স্থূলকায় বাবা-মায়ের সন্তানদের স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ বিপাক এবং চর্বি সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে এমন কিছু জেনেটিক কারণ তাদের মধ্যে ভাগ হয়ে থাকে। তবে শুধুমাত্র জেনেটিক্সই শৈশবের স্থূলতার একমাত্র কারণ নয়। পরিবেশগত এবং জীবনযাপনের কারণেও শিশুরা স্থূল হয়ে ওঠে।
৪. পরিবেশগত কারণ
একটি শিশু যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে – যেমন অস্বাস্থ্যকর খাবারের সহজলভ্যতা, ব্যায়ামের জন্য নিরাপদ স্থানের অভাব এবং খাদ্যাভ্যাসের আশেপাশের সামাজিক নিয়ম – শৈশবের স্থূলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফাস্ট ফুডের সহজলভ্যতা এবং বাড়িতে ও স্কুলে চিনিযুক্ত খাবারের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি খারাপ খাদ্যাভ্যাসকে আরও উৎসাহিত করে।
৫. মানসিক কারণ
সামাজিক, পারিবারিক বা স্কুল-সম্পর্কিত চাপের কারণে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং আবেগপ্রবণ খাদ্যাভ্যাস শিশুদের ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। দুঃখ বা চাপের অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত আবেগগত খাদ্যাভ্যাস স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি পায়।
শিশুদের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এই কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।