ফুসফুসকে সুস্থ রাখা এবং এর কার্যক্ষমতা বাড়ানো এখনকার দিনে অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে ধূমপায়ী এবং হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতে এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করতেও সাহায্য করে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. আরেফিন খান এই বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, “ফুসফুস ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি।” তিনি আরও জানান, ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সহ অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি, কারণ ধূমপানের ফলে তাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। একই সঙ্গে, শ্বাসের মাধ্যমে যেকোনো জীবাণু সহজে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে পারে। তাই ফুসফুস ভালো রাখতে ব্যায়াম করার পাশাপাশি ধূমপান ছাড়ার উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
আসুন জেনে নিই ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে কার্যকরী কিছু শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম:
১. ৪-৭-৮ রিল্যাক্সিং ব্রিদিং (৪-৭-৮ শিথিলকরণ শ্বাস-প্রশ্বাস):
এই ব্যায়ামটি মানসিক চাপ কমানো এবং গভীর ঘুম আনার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
পদ্ধতি: পিঠ সোজা রেখে বসুন। এবার মুখ দিয়ে ‘হুস’ আওয়াজ করে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন।
এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে নাক দিয়ে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনে গভীর শ্বাস নিন।
শ্বাস ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনুন।
এবার ঠোঁট গোল করে আবার ‘হুস’ করে পুরোটা বাতাস বের করে দিন, ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে।
কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পরপর চারবার এভাবে শ্বাস নিন।
উপকারিতা: এই ব্যায়াম দিনে দুবার করা ভালো। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়বে, মানসিক চাপ কমবে এবং ঘুমও ভালো হবে।
২. শ্বাস গুনে ব্যায়াম (কাউন্টেড ব্রিদিং):
এটি এক ধরনের ধ্যান বা মেডিটেশন যা মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে এবং মনঃসংযোগ বাড়ায়।
পদ্ধতি: মেরুদণ্ড সোজা করে বসে চোখ বন্ধ করে পরপর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমে আসবে।
প্রথমে প্রশ্বাস (নিশ্বাস ছাড়ার সময়) ছাড়ার সময় মনে মনে এক গুনুন।
তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত গুনুন।
পাঁচ পর্যন্ত গুনা শেষ হলে আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন।
উপকারিতা: এই ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করা উচিত। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে, মনঃসংযোগ বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
এই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলো নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি আপনার ফুসফুসকে শক্তিশালী করতে পারবেন এবং মানসিক শান্তি লাভ করবেন, যা সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ধূমপান ত্যাগ করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চলার মাধ্যমে এই ব্যায়ামগুলোর সুফল আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
