প্রত্যেক বাঙালি রান্নাঘরেই এলাচের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। রান্নার স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়ানো থেকে শুরু করে, এই ছোট্ট মসলাটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য। এলাচ শুধু একটি সুগন্ধি মশলাই নয়, এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
এলাচে ক্যালোরি, ফাইবার, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি এবং প্রোটিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিদ্যমান। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এলাচ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাজারে সাধারণত দুই ধরনের এলাচ পাওয়া যায় – সবুজ ও কালো এলাচ। তবে জানেন কি, এই ছোট এলাচ দানার গুণেই মুক্তি পাওয়া যায় অনেক শারীরিক ব্যাধি থেকে? এর জন্য প্রয়োজন প্রতিদিন এলাচ ভেজানো জল পান করা।
ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পর্যন্ত এলাচ জলের উপকারিতা অনেক। নিয়মিত এই জল পান করলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন, জেনে নেওয়া যাক এলাচ ভেজানো জল আমাদের শরীরে কী প্রভাব ফেলে:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: প্রতিদিন সকালে এলাচ ভেজানো জল পান করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এলাচে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই জল বিশেষ উপকারী।
রক্ত জমাট বাঁধা কমায় ও রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়: এই পানীয় রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা কিছুটা কমাতে পারে এবং শরীরে রক্ত সঞ্চালনের গতি বৃদ্ধি করে।
শরীরের দূষিত পদার্থ দূর করে: এলাচ ভেজানো জল শরীরের টক্সিন বা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে, যার ফলে ওজন কমতে পারে।
ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে: যাদের ত্বকে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ছে, তারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে এই জল খেলে ত্বক টানটান হয় এবং বলিরেখা কমে।
দাঁতের সংক্রমণ কমায়: এই জল দাঁতের গোড়ায় হওয়া বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
হার্টের জন্য উপকারী: এলাচে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন একটি করে এলাচ খাওয়া উচিত।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়: এলাচের ঔষধি গুণ হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
শ্বাসকষ্ট কমায়: শীতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ে। এলাচ এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। প্রতিদিন এলাচ ভেজানো জল খেলে শ্বাসকষ্ট এবং সর্দি-কাশি থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে: প্রতিদিন এলাচ খেলে তা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এলাচ শরীরে ক্যানসারের টিউমার এবং কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। এটি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমাতে সাহায্য করে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও ডিপ্রেশন কমায়: স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য অনেকেই বাদাম খান। তবে এলাচও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। এলাচের সুগন্ধ মস্তিষ্ককে সতেজ ও শান্ত রাখে। প্রতিদিন এলাচ জল খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ডিপ্রেশন দূর হয়।
অ্যালার্জির সমস্যা কমায়: এলাচে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বককে উজ্জ্বল করে: এলাচে থাকা ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এলাচ ত্বক পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে।
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: নিয়মিত এলাচ ভেজানো জল খেলে চুলের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
কীভাবে তৈরি করবেন এলাচ জল?
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস জলে ৭-৮টি এলাচ ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এলাচ ভেজানো জল ছেঁকে খালি পেটে পান করুন। ভেজানো এলাচগুলো ফেলে না দিয়ে রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। 1
সুতরাং, প্রতিদিনের রান্নাঘরের এই ছোট্ট সদস্যটি শুধু খাবারের স্বাদগন্ধই বাড়ায় না, বরং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এলাচ ভেজানো জল পান করে আপনিও পেতে পারেন এক সুস্থ ও রোগমুক্ত জীবন।