লিভারের নিচে ডান দিক ঘেঁষে অবস্থিত ছোট্ট একটি অঙ্গ হলো পিত্তথলি বা গলব্লাডার। যকৃত (লিভার) দ্বারা উৎপাদিত অতিরিক্ত পিত্ত এই পিত্তথলিতে এসে জমা হয়। গলব্লাডারে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে, যার মধ্যে পিত্তথলির পাথরই সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং এতে পেটের উপরের অংশের ডানদিকে তীব্র ব্যথা হয়। তবে, পিত্তথলিতে ব্যথার একমাত্র কারণ কিন্তু সবসময় পাথর নয়। পিত্তথলিতে আরও বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে, যার ফলে অনেকেই এর যন্ত্রণায় কষ্ট পান।
প্রাথমিকভাবে এই ব্যথার কারণ হিসেবে পিত্তথলিতে পাথরকেই মনে করা হয়। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সেটাই একমাত্র কারণ নয়। পাথর হওয়া ছাড়াও গলব্লাডারে ব্যথার অন্য কিছু কারণ রয়েছে:
কোলেসিস্টিস (Cholecystitis): এটি দু’ধরনের হয় – অ্যাকিউট কোলেসিস্টিস এবং অ্যাক্যালকুলাস কোলেসিস্টিস। অ্যাকিউট কোলেসিস্টিস ঘটে পিত্তথলিতে পাথর আটকে যাওয়ার ফলে, যা পিত্তের প্রবাহে বাধা দেয় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, অ্যাক্যালকুলাস কোলেসিস্টিস হলো পিত্তনালিতে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যা পাথরের উপস্থিতি ছাড়াই পিত্তথলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
কোলেডোকোলিথিয়াস (Choledocholithiasis): পিত্তনালিতে পাথরের উপস্থিতি এই নামে পরিচিত। এই পাথরগুলো পিত্তের স্বাভাবিক প্রবাহকে রোধ করে, ফলে পিত্তথলিতে চাপ ও ব্যথা বেড়ে যায়।
বিলিয়ারি স্লাজ (Biliary Sludge): পিত্তথলিতে কোলেস্টেরল মনোহাইড্রেট, ক্যালশিয়াম, বিলিরুবিন এবং অন্যান্য লবণের সংমিশ্রণই হলো বিলিয়ারি স্লাজ। এই ঘন পদার্থগুলো পিত্তথলিতে জমা হয়ে ব্যথার কারণ হতে পারে, এমনকি এটি পাথরেও রূপান্তরিত হতে পারে।
এবার জেনে নিন কোন কোন লক্ষণগুলো গলব্লাডারে সমস্যার ইঙ্গিত দেবে:
১. তীব্র পেটে ব্যথা এবং বিস্তৃতি: গলব্লাডারের যেকোনো সমস্যা দেখা দিলেই পেটের ডানদিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যথা পেটের ডান দিক থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে কোমর ও ডান কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। এরকম ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
২. বমি বমি ভাব ও বমি: পেটের ডানদিকে তীব্র ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব, গা গোলানো এবং বমিও হতে পারে। এটি পিত্তথলির সমস্যার একটি সাধারণ লক্ষণ।
৩. জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: পিত্তথলিতে প্রদাহের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং জ্বর জ্বর ভাব থাকতে পারে। এটি সংক্রমণের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
৪. প্রস্রাবের রঙের পরিবর্তন: পিত্তথলিতে সমস্যা দেখা দিলে কিংবা পাথর জমার ফলে প্রস্রাবের রঙে পরিবর্তন আসতে পারে। এক্ষেত্রে প্রস্রাব গাঢ় রঙের হতে পারে, যা লিভার বা পিত্তথলির কার্যক্ষমতার গোলযোগ নির্দেশ করে।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি, কারণ সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে।