একসময়ের প্রবীণদের রোগ বলে পরিচিত ‘পাইলস’ (হেমোরয়েড), বর্তমানে কম বয়সীদের মধ্যেও মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে। অনিয়মিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত জলের অভাবে এই সমস্যা মহামারী আকার ধারণ করছে। মলদ্বারের শিরা ফুলে গিয়ে যে অসহ্য ব্যথা এবং রক্তপাত, তা থেকে মুক্তি পেতে প্রাথমিক পর্যায়ে সতর্কতাই একমাত্র পথ, অন্যথায় অপেক্ষা করছে জটিল চিকিৎসা।
হেমোরয়েড কী এবং কেন হয়?
চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে হেমোরয়েড বলা হয়, সাধারণ মানুষ তা পাইলস নামেই চেনেন। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মলদ্বারের ভেতরের ও বাইরের শিরাগুলি ফুলে যায়, অথবা মলদ্বারের আশপাশে কিছু মাংসপিণ্ড জমা হয়। এই মাংসপিণ্ড থেকে রক্তপাতের পাশাপাশি তীব্র ব্যথা হতে পারে, বিশেষত গরম ও মসলাদার খাবার খেলে সমস্যা বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পায়ুদ্বারের ভেতরে থাকা শিরাগুলো দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে ফুলে ওঠে, যা একসময় ফেটে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়। বংশগত কারণেও এই রোগ পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তরিত হতে পারে।
সতর্কীকরণ লক্ষণগুলি:
মলত্যাগের সময় অস্বাভাবিক ব্যথা বা জ্বালাপোড়া।
মলের সঙ্গে রক্ত পড়া।
মলদ্বারের চারপাশে ফোলা বা পিণ্ড অনুভব করা।
মলদ্বারের কাছে চুলকানি।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই লক্ষণগুলি ধরা পড়লে সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সমাধানের পথ: জীবনযাত্রার পরিবর্তন থেকে শল্যচিকিৎসা:
কলকাতার ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রুদ্রজিৎ পাল জোর দিয়ে বলেছেন, পাইলসের প্রধান কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য। এটি কমাতে পারলেই পাইলসের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। ঘরোয়া উপায়ে এই সমস্যার সমাধানে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়মের উপর জোর দিয়েছেন:
১. ফাইবারযুক্ত খাবার: পাইলসের রোগীদের অবশ্যই ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। ফাইবার মলকে নরম করে এবং নিয়মিত মলত্যাগে সাহায্য করে, যা শিরাগুলোর উপর চাপ কমায়।
২. পর্যাপ্ত জল পান: দিনে পর্যাপ্ত জল পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়তে পারে। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখলে কেবল পাইলস নয়, অনেক রোগের ঝুঁকি কমে।
৩. নিয়মিত শরীরচর্চা: ডা. পাল জানান, সুস্থ থাকতে হলে ব্যায়াম অপরিহার্য। ব্যায়াম অন্ত্রের চলাচল ঠিক রাখে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায়। প্রতিদিন অন্তত ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
৪. শিশুদের সঠিক টয়লেট ট্রেনিং: এই চিকিৎসক আরও জানান, ছোটবেলা থেকে সঠিক টয়লেট ট্রেনিং না পাওয়ার কারণে অনেক শিশু অনিয়মিত মলত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, যা পরবর্তীতে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অল্প বয়সেই পাইলসের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
ডা. পাল পরামর্শ দিয়েছেন, এই নিয়মগুলি মেনে চলার পরও যদি পাইলসের সমস্যা না কমে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। ল্যাক্সেটিভসহ বেশ কিছু ওষুধ এই অবস্থায় অত্যন্ত কার্যকরী।
তবে, যদি রোগ আরও গভীরে চলে যায় এবং ওষুধেও কাজ না হয়, তখন শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে এই অপারেশন অত্যন্ত নিরাপদে করা হয় এবং সার্জারির পর রোগী খুব সহজেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। পাইলস একটি জীবনশৈলীজনিত রোগ, তাই এর প্রতিরোধে সচেতন জীবনযাপনই প্রধান হাতিয়ার।