নাক থেকে রক্ত পড়া বা এপিসটাক্সিস একটি অতি সাধারণ সমস্যা। যারা প্রায়শই এই সমস্যায় ভোগেন, তারা জানেন এটি কতটা বিরক্তিকর হতে পারে। নাকের রক্তপাত দেখতে ভয়াবহ হলেও, সৌভাগ্যবশত এর কিছু কার্যকর ঘরোয়া সমাধান রয়েছে। এর গুরুত্ব নির্ভর করে রক্তপাতের কারণ ও ঘনত্বের উপর। নোজ ব্লিডিং মূলত দুই প্রকার – ইন্টেরিয়র (সামনের অংশ) ও পোস্টেরিয়র (পেছনের অংশ) ব্লিডিং।
নাকের সামনের অংশে কোনো রক্তজালিকা ছিঁড়ে গেলে ইন্টেরিয়র ব্লিডিং হয়। অন্যদিকে, গলার কাছের অংশের রক্তজালিকা ছিঁড়ে গেলে পোস্টেরিয়র ব্লিডিং হয়। কিছু ক্ষেত্রে এই রক্তপাত অন্তত ২০ মিনিট পর্যন্ত চলতে পারে। ঘরোয়া উপায়ে ইন্টেরিয়র ব্লিডিং বন্ধ করা গেলেও পোস্টেরিয়র ব্লিডিং বন্ধ করার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি আপনার মাঝে মাঝেই নোজ ব্লিডিং-এর অভিজ্ঞতা থাকে, তবে এই ঘরোয়া টোটকাগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
নোজ ব্লিডিং কি কারণে হয়?
আমাদের নাকের ভেতরের অংশ ছোট ছোট রক্তনালীতে পরিপূর্ণ থাকার কারণে এটি শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল অংশ। এই রক্তনালীতে সামান্য আঘাত লাগলেই নোজ ব্লিডিং শুরু হতে পারে। নিচে নোজ ব্লিডিং-এর কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:
গরম, শুষ্ক বাতাস (বিশেষত শীতকালে হিটারের ব্যবহারের কারণে)
শুষ্ক, গরম আবহাওয়া
শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ
জোরে নাক টানা বা নাক ঝাড়া
নাকে বা মুখে আঘাত লাগা
অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া
অতিরিক্ত পরিমাণে নাকের স্প্রে ব্যবহার
নাকের ভেতরে কোনো বাহ্যিক বস্তু প্রবেশ করানো
রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া)
রাসায়নিক উত্তেজকের প্রভাব
কীভাবে ঘরোয়া উপায়ে নোজ ব্লিডিং বন্ধ করবেন?
সহজ পদ্ধতিতে নোজ ব্লিডিং বন্ধ করার কিছু কার্যকর উপায় নিচে দেওয়া হলো:
১. কোল্ড কম্প্রেস (ঠান্ডা সেঁক): নোজ ব্লিডিং বন্ধ করার একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি হলো নাকের ওপর ঠান্ডা সেঁক দেওয়া। একটি পরিষ্কার কাপড় বা তোয়ালে বরফ জলে ভিজিয়ে নাকের ওপর কিছুক্ষণ চেপে ধরলে রক্তনালী সংকুচিত হয় এবং রক্তপাত বন্ধ হয়।
২. নাক চেপে ধরা: বুড়ো আঙুল ও তর্জনীর সাহায্যে নাকের নরম অংশ ৫-১০ মিনিট ধরে চেপে ধরুন। এতে সেপ্টামের (নাকের ভেতরের পর্দা) উপর রক্তের চাপ পড়ে এবং খুব দ্রুত রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় অবশ্যই মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে থাকুন। ধীরে ধীরে চাপ দেওয়া ছেড়ে অন্তত ৫ মিনিট শান্ত হয়ে বসুন। রক্তপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।
নোজ ব্লিডিং বন্ধের জন্য কিছু ঘরোয়া টোটকা:
এখানে কিছু রান্নার উপকরণ ও প্রাকৃতিক উপাদানের কথা বলা হলো যা খুব দ্রুত নোজ ব্লিডিং বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে:
ভিটামিন K সমৃদ্ধ খাবার: কলা, পালং শাক, সরিষার শাক, ব্রোকলি ও বাঁধাকপির মতো ভিটামিন K সমৃদ্ধ খাবার শরীরে কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা নাকের ভেতরের অংশকে আর্দ্র রাখতে সহায়ক। দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য ভিটামিন K সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। সবুজ শাকসবজি রক্ত জমাট বাঁধতেও সাহায্য করে।
ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার: প্রতিদিন ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তনালীগুলো মজবুত হয়, ফলে সহজে ছিঁড়ে যেতে পারে না এবং নোজ ব্লিডিং বন্ধ হয়। (দ্রষ্টব্য: ভিটামিন C এবং K দীর্ঘমেয়াদী মুক্তির মাধ্যম, তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য নয়।)
আপেল সিডার ভিনিগার: রক্তনালী মজবুত করতে আপেল সিডার ভিনিগার অত্যন্ত কার্যকর একটি ঘরোয়া দাওয়াই। সামান্য তুলো ভিনিগারে ভিজিয়ে নাকের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় কমপক্ষে ১০ মিনিটের জন্য রাখুন। এটি দ্রুত কাজ শুরু করে।
স্যালাইন জল (লবণাক্ত জল): শীতকালে নাকের ভেতরের শুষ্কতা নোজ ব্লিডিং-এর অন্যতম প্রধান কারণ। স্যালাইন জল এই সমস্যা দূর করতে পারে। নাকের ভেতরের অংশের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে, একটি বাটিতে কিছুটা স্যালাইন জল ভালোভাবে মিশিয়ে নাকের মধ্যে কয়েক ফোঁটা দিন।
গোলমরিচ গুঁড়ো: এটি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ফলে আহত স্থানের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে। নোজ ব্লিডিং শুরু হলেই এক চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো জলে মিশিয়ে খেলে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ হতে পারে।
বিছুটি পাতা: বিছুটি পাতা একটি প্রাকৃতিক হাইমোস্টাটিক উপাদান (যা রক্তপাত বন্ধ করে)। বিছুটির রস অ্যালার্জিজনিত নোজ ব্লিডিং বন্ধ করতেও সক্ষম। বিছুটি জলে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে, তার মধ্যে তুলো ভিজিয়ে নাকে ৫-১০ মিনিট লাগালে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়।
পর্যাপ্ত পরিমাণ জল: শরীরে জলের অভাব হলে নাকের ভেতরের মিউকাস পর্দা শুকিয়ে যায়, যার ফলে নোজ ব্লিডিং শুরু হতে পারে। তাই সারাদিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করা প্রয়োজন।
ডঃ পি এস ফাডকের ‘হোম ডক্টর, ন্যাচারাল হিলিং উইথ হারবস, কোনডিমেন্টস এন্ড স্পাইসেস’ বই অনুসারে, নোজ ব্লিডিং বন্ধ করতে ধনে পাতা, আমের মুকুল এবং পাকা আমের আঁটির ভেতরের নরম শাঁসের রস খাওয়াও উপকারী।
অতিরিক্ত রক্তপাত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে উপরের পদ্ধতিগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সাধারণ নোজ ব্লিডিং পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।