দিন দিন কেন বাড়ছে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের সংখ্যা? জানালেন নামী ডাক্তার

ফ্যাটি লিভার এখন আর কেবল জটিল অসুখ নয়, এটি এখন ভারতের বহু মানুষের কাছে এক মহামারীর রূপ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বারবার এই রোগ নিয়ে দ্রুত সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু ঠিক কী কারণে ফ্যাটি লিভারের রোগীর সংখ্যা এত মারাত্মক হারে বাড়ছে?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম ঢাকুরিয়ার মণিপাল হাসপাতালের বিশিষ্ট গ্যাস্ট্রোএনটেরোজিস্ট ডাঃ দেবোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি সাফ জানালেন, “আমাদের দেশের একটা বড় অংশের মানুষের ফ্যাটি লিভার রয়েছে। আর এই অসুখ সব বয়সীদেরই বিপদে ফেলতে পারে। তাই রোগটা নিয়ে এখনই সচেতন হওয়া জরুরি।”

কেন বাড়ছে ফ্যাটি লিভারের আক্রান্তের সংখ্যা? ডাঃ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ৩ প্রধান কারণ

ডাঃ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, লাইফস্টাইল এবং মেটাবলিক ফ্যাক্টর—এই দুইয়ের কারণেই লিভারে ফ্যাট জমার প্রবণতা বেড়েছে।

১. অতিরিক্ত ওজন ও অলস জীবনযাপন: আমাদের মধ্যে অনেকেরই ওজন বেশি। তারা নিয়মিত হাই ক্যালোরি খাবার খাচ্ছেন, কিন্তু সেভাবে শরীরচর্চা করছেন না। এই জীবনশৈলীর ফলেই লিভারে ফ্যাট জমার আশঙ্কা থাকে।

২. অ্যালকোহল সেবনের মারাত্মক অভ্যাস: মদ যে শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই পানীয় সরাসরি লিভারকে আক্রমণ করে এবং ফ্যাট জমতে সাহায্য করে। মদ থেকে যে ফ্যাটি লিভার হয়, তাকে অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলা হয়।

৩. ফাস্ট ফুড ও ভাজা খাবারের বাড়াবাড়ি: যে কোনও ভাজা খাবার বা ফাস্ট ফুড শরীরের জন্য অত্যন্ত খারাপ। হাই ক্যালোরি এবং অতিরিক্ত ফ্যাট সমৃদ্ধ এই খাবারগুলি নিয়মিত খেলে লিভারে ফ্যাট জমার ঝুঁকি বাড়ে। তাই ফাস্ট ফুড খাওয়া ছাড়তেই হবে।

বিশেষ সতর্কতা: রোগা মানুষেরও ঝুঁকি!

ডাঃ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বিশেষ দিকে নজর দিয়েছেন, যা ভারতে খুবই দেখা যায়। তিনি মন্তব্য করেন, “মেটাবোলিক ও জিনগত কিছু কারণে ওজন কম থাকা মানুষেরও কিছু ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার হয়। এটা ভারতে খুবই দেখা যায়।” অর্থাৎ, আপনি রোগা হলেই যে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি নেই, এমনটা ভাবা ভুল!

 

ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচতে চান? এই ৪টি নিয়ম আজই মেনে চলুন

 

ডাঃ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, এই সমস্যা থেকে বাঁচতে চাইলে কঠোরভাবে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এই কয়েকটি অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারলেই জীবনযাত্রার উন্নতি হবে এবং লিভার সুস্থ থাকবে।

১. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: ফাস্ট ফুড খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করুন। বাড়িতেও তেল কম দেওয়া স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। ২. ওজন নিয়ন্ত্রণ: শরীরের অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমাতে হবে। ৩. নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করুন। হাঁটা, দৌড়ানো বা হালকা ব্যায়ামও যথেষ্ট। ৪. মদ্যপান বর্জন: মদ্যপান থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে হবে।

ব্যাস, এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে পারলেই এই জটিল অসুখ থেকে সেরে ওঠা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

বিদ্র: এই প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্য নিয়ে লেখা হয়েছে। যেকোনো শারীরিক সমস্যা বা ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy